রাসেলস ভাইপার নিয়ে অহেতুক আতঙ্ক কাম্য নয়

সম্পাদকীয়

রাসেলস ভাইপার সাপ। সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়ার উপস্থিতি বিশেষ করে পদ্মা বিধৌত অঞ্চলগুলোর কাশবন সমৃদ্ধ চরাঞ্চলে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রকল্প ভেনম রিসার্চ সেন্টারের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশের প্রায় ২৭টি জেলায় রাসেলস ভাইপার রয়েছে। এই সাপ ডিম না দিয়ে একসঙ্গে ২০ থেকে ৮০টি পর্যন্ত জীবন্ত বাচ্চা প্রসব করতে পারে! এই প্রজাতির সাপ দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। অনেককে কামড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে মনে রাখা চাই, সাপে কাটলে আতঙ্কিত না হয়ে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে অ্যান্টিভেনম নেওয়াই উত্তম। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত মজুত আছে।

সম্প্রতি রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও মানুষের সঙ্গে এই সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। জানা যায়, মানুষ খেয়াল না করে খুব কাছে গেলে সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে। এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা বাড়াতে ইতোমধ্যে বিবৃতি দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনে নিকটস্থ বন বিভাগের অফিস থেকে বা জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করে সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

বন্য প্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি রাসেলস ভাইপার নিয়ে সচেতনতার চেয়ে আতঙ্ক বেশি ছড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে যাওয়ায় এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে যেকোনো সাপ দেখলেই মারা হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। নির্বিচারে সাপ নিধন- পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাবসহ খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে আরও অনেক বিষয়ের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সম্প্রতি দেশের চরাঞ্চল এবং নদীর তীরবর্তী লোকালয়ে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলার মানুষকে এই সাপ দংশনও করেছে। তাই সাপ নিয়ে দেশে এখন আলোচনা ও আতঙ্ক দুটাই ছড়াচ্ছে।

আমরা মনে করি, রাসেলস ভাইপারসহ যেকোনো সাপ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হলে এবং এদের বিচরণস্থল এড়িয়ে চললে দংশিত হওয়ার ঝুঁকি কম। একইসাথে গুজব ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি না করে এ বিষয়ে দেশের সব অঞ্চলে সচেতনতা বাড়ানো আবশ্যক।

শেয়ার করুন