শিশুদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানের মাধ্যমে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা শিশুদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানের মাধ্যমে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন, যেন একদিন তারা চাঁদও জয় করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের একদিন চাঁদে যেতে হবে। আমাদের চাঁদকে জয় করতে হবে। আমাদের সন্তানদেরকে শৈশব থেকেই বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পূণর্ব্যক্ত করে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩’ ও প্রদান করেন। তিনি বলেন, আমি চাই যে, বাংলাদেশ ২০৪১ সাল নাগাদ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে উঠবে। যেখানে আমাদের স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি ও সোসাইটিও স্মার্ট হবে। আমাদের আজকের শিশুরা আগামীদিনের স্মার্ট বাংলাদেশের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর জীবন পেতে পারে, সেজন্য তাঁর সরকার ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই লক্ষ্য নিয়েই শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষায়, সংস্কৃতি চর্চা, খেলাধূলা সবদিক থেকেই উপযুক্ত নাগরিক হিসেবেই গড়ে তুলতে চাই। আর তা করার জন্য যা যা করণীয়, অবশ্যই আমরা তা করবো। শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি হিসেবে শিশুকাল থেকেই ধীরে ধীরে তারা গড়ে উঠবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশের উন্নয়নে তাদের চিন্তা-ভাবনা, তারা আরো নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি দিয়েই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটাই আমি চাই।’

আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক ও দেশের কর্ণধার হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিশুদের মধ্য থেকেই কেউ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হবে, বড় বড় সংস্থায় চাকরি করবে, বৈজ্ঞানিক হবে। এমনকি একসময় তো আমাদের চাঁদেও যেতে হবে। চাঁদও জয় করতে হবে।

তিনি বলেন, সেই বিজ্ঞান জ্ঞান যেন আমাদের শিশুরা এখন থেকেই পায়, সেজন্য ব্যবস্থা করতে হবে। ইতোমধ্যে গবেষণা ও শিক্ষার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। অ্যারোস্পেস এন্ড এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ও (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়) করেছি। অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার করে দিয়েছি। এখন থেকেই আমাদের শিশুদের সেইভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের পদক্ষেপের ফলে স্বাক্ষরতার হার ৭৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা একটা সুষম জনকল্যাণমুখী সার্বজনীন মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে চাই। যেখানে শুধু কেতাবি পড়া পড়ে নয়, ছোট্ট শিশুদের ভেতরে যে মেধা মননশীলতা, সেগুলো আমাদের বের করে আনতে হবে। তাদের সুযোগ দিতে হবে। তাদের ভেতরে যে একটা কিছু করার ক্ষমতা রয়েছে, সেটাই যাতে বিকশিত হতে পারে, সেই সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার।

সরকারপ্রধান বলেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা শিক্ষা কারিকুলাম আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানের পথে নিয়ে আসছি। অনেক স্কুল হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি স্কুলেই কম্পিউটার ল্যাব করে দেবো এবং যেটা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো থেকেই শুরু হবে। আর আমরা প্রাক-প্রাথমিকও চালু করেছি, যেটা এখন দুই বছরের জন্য করতে চাচ্ছি। যেখানে পড়াশোনা নয়, বাচ্চারা যাবে একসঙ্গে বসবে, সবার সঙ্গে খেলাখূলা করবে।

তিনি বলেন, ‘ওই খেলাধুলার ভেতর দিয়েই তাদের ভেতরের যে সুপ্ত প্রতিভা ও মেধা রয়েছে, সেটাকে যেভাবে বিকশিত করা যায়, সেই ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।’

শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি এবং বছরের শুরুতেই তাঁর সরকারের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সেই ২০১০ সালে শুরু করে এই পর্যন্ত ৪’শ ৬৪ কোটি ৭৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৮৩ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে এবং মায়েদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বৃত্তির টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সেই জন্য সারাদেশে ২০ লাখ মাকে মোবাইল ফোনও কিনে দেওয়া হয়েছিল। ঝরেপড়া রোধকল্পে স্কুলগুলোতে কমিউনিটি স্কুল ফিডিং কর্মসূচিও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে তাঁর সরকার। শিশুশ্রম বন্ধ ও চার হাজার স্যাটেলাইট বিদ্যালয় চালুসহ শিক্ষার সম্প্রসারণে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এই বাংলাদেশ আমাদের সোনার দেশ। তাই তিনি সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। আর আজকের এই শিশুরাই সেই সোনার বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। শেখ হাসিনা বলেন, আমি বলবো সবাইকে এইভাবে এক হয়ে কাজ করলে এই দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবোই।

শেয়ার করুন