আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ নেমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মুদ্রানীতির সংকোচনমূলক উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমরা রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করেছি, যেমন বাজেট ঘাটতি হ্রাসকরণ, কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিতকরণ এবং বিভিন্ন খাতে কৃচ্ছ্রতাসাধনের উদ্যোগ। আমাদের গৃহীত এসব নীতি-কৌশলের ফলে আশা করছি আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নেমে আসবে।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন,এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মুদ্রানীতিতে ইতোমধ্যে সংকোচনমূলক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নীতি সুদহার (রেপো) উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে ৮.৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে এবং ব্যাংক সুদের হার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এর পাশাপাশি রপ্তানি উৎসাহিতকরণ এবং প্রবাস আয়ে গতি সঞ্চারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডলারের বিনিময় হারের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে এ পন্থা অবলম্বন করা হলে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে। অথচ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের প্রয়োজন ধারাবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধি। এমতাবস্থায়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখা -এ দু’টি আপাত বিপরীতমুখী লক্ষ্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে আমরা সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ব্যবধান ঘুচিয়ে শিগগিরইই উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে ফিরতে পারব।
‘উন্নত-সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রসঙ্গে সরকারের নানা উদ্যোগের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদানের চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপর যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হলো দেশে শিল্পায়ন ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য কাঙ্ক্ষিত অনুকূল ও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তার সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি তৈরি। আমরা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র মাধ্যমে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছি। ব্যবসা সহজীকরণের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে ১১০টি সংস্কার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পদ সঞ্চালনের পরিকল্পনা করেছি। এসব উদ্যোগের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগামী অর্থবছরে ৬.৭৫ শতাংশে এবং মধ্যমেয়াদে ৭.২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আমরা আশা রাখছি।
তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা জালের আওতায় বরাদ্দ ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১২.২ শতাংশ বেশি।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে কর রাজস্ব আহরণে গতি বৃদ্ধি এবং কর প্রশাসনকে আরও জনবান্ধব এবং কার্যকর করার লক্ষ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আইনি কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, উন্নয়নের গতিকে টেকসই করতে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে আমরা কর অব্যাহতি কমিয়ে আনাসহ কর আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা কৌশল অবলম্বন করেছি। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ সমাধান করে মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। একইসঙ্গে, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের বাস্তবতা মাথায় রেখে জাতীয় শুল্কনীতি সংস্কার করা হয়েছে।