চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আজ রোববার (৩০ জুন) সকাল ১০টায় ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীন দেশের ৬০ জেলায় একযোগে পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর ১টায়।
সময়সূচি অনুযায়ী, প্রথম দিনে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোতে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর মাদরাসা বোর্ডের অধীনে আলিমে কোরআন মাজিদ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসির (বিএম/বিএমটি) বাংলা-২ বিষয়ের পরীক্ষা হচ্ছে।
পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করানো হয়। সকালে পল্লবীর দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজে দেখা যায়, ৯টার আগেই অভিভাবকসহ পরীক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন। কলেজ গেট খুলে দেওয়া হয় ৯টা ১০ মিনিটে।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন না বলে গেটে মাইকিং করে জানানো হয়। হলে ঢোকার আগে শিক্ষার্থীদের করা হয় চেকিং। শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা মেনে এসব ডিভাইস তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের দিতে দেখা গেছে।
এমন আয়োজনে ছিল বৃষ্টির বাগড়া। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, তো কখনো মুষলধারে বৃষ্টিতে ভিজেছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বৃষ্টিতে অনেক অভিভাবক আশ্রয় নেন দোকানের শাটারের নিচে, শিক্ষার্থীরাও দৌড়ে ঢুকেছেন কেন্দ্রে।
কেন্দ্রটির পরীক্ষার্থীরা বেশিরভাগই পল্লবীর সরকারি বাংলা কলেজের। তাদের বাসা পল্লবী, মিরপুর এলাকার। এ জন্য অনেক শিক্ষার্থীকে অটোরিকশায় আসতে দেখা গেছে। যারা যানবাহন পাননি তারা এসেছেন হেঁটে।
মিরপুর ১ নম্বর থেকে শিক্ষার্থী পারভেজ আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন অভিভাবক জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ঝামেলা এড়াতে ৯টার আগেই রওনা দিয়েছি রিকশায়। ঠিকমতো আসতে পেরেছি। নরমালি ৬০ টাকা ভাড়া, আজ বৃষ্টি দেখে ৭০ টাকা নিয়েছে। ভাড়া বেশি নিয়েছে বলা যায় না।’
খিলক্ষেত থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে এসেছেন অভিভাবক শখি আহমেদ। তার ছেলের নাম সানোয়ার আহমেদ। তিনি বলেন, ‘একটা অস্থির সময় চলছে। সবার হাতে স্মার্টফোন। পড়াশোনায় ছেলেমেয়েরা সময় দিচ্ছে না। তবে আমার ছেলের প্রস্তুতি ভালো। অনেক কষ্ট করে ওকে গাইড করেছি। আশা করি ওর পরীক্ষা ভালো হবে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট অঞ্চলের চারটি জেলার এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), এইচএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ৯ জুলাই থেকে এসব জেলায় পূর্বঘোষিত সময়সূচি মেনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। স্থগিত পরীক্ষাগুলোর সময়সূচি পরবর্তীতে প্রকাশ করবে স্ব স্ব বোর্ড।
চলতি বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, কারিগরি বোর্ড ও মাদরাসা বোর্ডের এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), এইচএসসি (ভোকেশনাল), ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৫০ হাজার ২৮১ এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৫০৯ জন। ২০২৩ সালের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৯১ লাখ ৪৪৮ জন।
এবার সারাদেশে মোট কেন্দ্র দুই হাজার ৭২৫টি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৯ হাজার ৪৬৩টি। গত বছরের চেয়ে এবার প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ২৯৪টি ও কেন্দ্র বেড়েছে ৬৭টি। এছাড়া বিদেশের আটটি কেন্দ্রে মোট ২৮১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
গত কয়েক বছরের মতো এবারও এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ সালের পুনর্বিনাস করা পাঠ্যসূচি (সিলেবাস) অনুযায়ী সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ের পরীক্ষায় বসেছেন পরীক্ষার্থীরা।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চারটি জেলায় পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। বাকি ৬০ জেলায় সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। আশা করি, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর একটি চক্র প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়ে থাকেন। ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকবে। পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তারপরও কেউ এ ধরনের গুজব ছড়ালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয় হবে।’
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। তারা শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও জনসাধারণকে নানান ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এইচএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করার প্রয়োজনে পুলিশের ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ৩০ জুন থেকে পরীক্ষা চলাকালীন পর্যন্ত এই আদেশ বলবৎ থাকবে।
শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন নয়, যেসব জেলা ও বিভাগীয় শহরে রোববার থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, তার সব জায়গায় পুলিশের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।