পূর্ব বাংলার মানুষের জন্য উচ্চশিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) নানা ঘটনা ও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে পদার্পণ করছে ১০৪তম বছরে। জাতির ক্লান্তিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই দেখিয়েছিল আলোর দিশা। বাংলা ভাষাকে নিজের মাতৃভাষা হিসেবে রূপ দিয়ে ঝরিয়েছে রক্ত। দেশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে রক্ষা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। স্বাধীন পতাকা ও মানচিত্র এনে দেওয়া এবং স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অগ্রহণী ভূমিকা রেখেছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের বুকে দেশকে প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্ববিদ্যালয়ও এটি। তবে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি, তীব্র আবাসন সংকটসহ নানা সমস্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে পিছিয়ে রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংগুলোতে চোখ বুলালে দেখা যায়, কিউএস এশিয়া ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২৪-এর করা তালিকায় শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা পায়নি বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। এই তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১৪০তম।
এর আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে র্যাঙ্কিং করেছিল, সেই তালিকায় শীর্ষ ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিল না। এই ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ভারতের ২৪টি ও পাকিস্তানের ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করে নিয়েছিল।
৩০ এপ্রিল প্রকাশিত এশিয়ার ৭৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’এর সেরা ৩০০ এর মধ্যেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা হয়নি। যেখানে সেরা ৩০০ তালিকায় ভারতের ৪০টি, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছিল।
এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বরে স্পেনের মাদ্রিদভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ওয়েবমেট্রিকসের করা র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ এক হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। ৩১ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে করা এ র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল যৌথভাবে ১ হাজার ৫১তম।
তবে আন্তর্জাতিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং পিছিয়ে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে শিক্ষার্থী ও সারাদেশের মানুষের প্রবল আশা ও আকাঙ্ক্ষা রয়েছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করুক এবং দেশ ও দেশের বাইরে সুনাম অর্জন করুক এই প্রত্যাশা রাখেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সারাদেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। সীমিত সম্পদের মধ্যে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রসারে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শতকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণা প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে৷
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের বাজারমুখী দক্ষতা যেনো বাড়াতে পারি সেজন্য অনুষদ ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আমরা ভবিষ্যতে করব। যেনো শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে চাকরির বাজারে বাড়তি সুবিধা পায়। এটিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল উপজীব্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে উচ্চশিক্ষা’ এই উপজীব্যকে সামনে রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে সকল বিভাগের একাডেমিক কারিকুলামকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে এর ফলে একজন শিক্ষার্থী গতানুগতিক শিক্ষার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে ‘স্কিলড মেনপাওয়ার’ হিসেবে গড়ে উঠে৷ সেজন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
তিনি বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় আমাদের অনেক অপ্রতুলতা থাকা সত্বেও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বন্ধনটাকে দৃঢ় করে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল-একাডেমিক কোলাবোরেশান’ বৃদ্ধি করতে চাই এবং ইনোভেশনকে আরও বৃদ্ধি করতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে ‘ওয়াল্ড র্যাংকিং’ কে মাথায় রেখে যা করা প্রয়োজন সেগুলো করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এতসব সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে আমরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও বিশ্বমানের করতে পারি তাহলে আমরা যে স্বপ্ন দেখছি তা বাস্তবায়ন হবে।
১০৪তম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ‘তরুণ প্রজনোর দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।