গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন গড়াল দশম মাসে

মত ও পথ ডেস্ক

গাজায় শরণার্থী শিবিরে বর্বর ইসরায়েলি হামলা। ফাইল ছবি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসন গড়িয়েছে দশম মাসে। গত বছরের অক্টোবর থেকে ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলের আগ্রাসন চলছে এবং চলমান এই যুদ্ধ দশম মাসে প্রবেশ করার এই দিনে গাজায় আরও বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

রোববার (৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা শহরের পশ্চিমে বাস্তুচ্যুত লোকদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত একটি স্কুলকে লক্ষ্য করে চালানো হামলায় অন্তত চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

মধ্য গাজায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আল-জাওয়াইদা এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়েছে এবং এতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলকে লক্ষ্যবস্তু করার একদিন পর এই হত্যাকাণ্ড ঘটে, গত শনিবারের সেই হামলায় কমপক্ষে ১৬ জন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছিলেন।

প্যারামেডিকরা জানিয়েছেন, গাজা শহরের আরেকটি বাড়িতে হামলায় আরও ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ওয়াফা নিউজ এজেন্সি অনুসারে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো শহরের স্ট্রীট ৮-এ সাবরা পাড়ায় বেসামরিক নাগরিকদের একটি দলকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালায়, এতে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা রাতের আঁধারে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের একটি পৌরসভা ভবনে হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, হামাস এটি ‘সামরিক কার্যকলাপের’ জন্য ব্যবহার করছিল।

খান ইউনিসের হামলায় হতাহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে হামাসের যোদ্ধারা স্কুল ও হাসপাতালসহ বেসামরিক এলাকা ও অবকাঠামোতে আশ্রয় নেয় না বলে বরাবরই জানিয়েছে হামাস।

এদিকে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮ হাজার ১৫৩ জনে পৌঁছেছে বলে অঞ্চলটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে।

ইসরায়েলি এই আগ্রাসন গাজার জনসংখ্যার ৯০ শতাংশকে বাস্তুচ্যুত করেছে, প্রায় ৫ লাখ মানুষকে ‘বিপর্যয়কর’ ক্ষুধার সম্মুখীন করেছে এবং উপত্যকাটির বেশিরভাগ হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে বলে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে।

ক্রমবর্ধমান হতাহতের ঘটনা গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-আকসা হাসপাতালের ওপরও চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। যদিও এই হাসপাতালটি ইতোমধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনীর নিরলস হামলার করণে আহত ফিলিস্তিনিদের দ্বারা পরিপূর্ণ।

জাবালিয়ার আল-আওদা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মুহাম্মদ সালহা জানিয়েছেন, ‘সেখানকার পরিস্থিতি খুবই কঠিন’।

মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

শেয়ার করুন