দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি গত কয়েক বছর ধরেই নানা সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হচ্ছে। নতুন অর্থবছরেও দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বিনিয়োগ ও রাজস্ব আয় এই চারটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগোতে হচ্ছে। দেশে বিদ্যমান বাস্তবতায় এসব খাতে লক্ষ্য অর্জন বেশ কঠিন। সদ্য বিদায়ি অর্থবছরেও এসব খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায়, এসবের পাশাপাশি আরও কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আইএমএফের শর্তের বাস্তবায়ন এবং এর প্রভাব মোকাবিলা। এছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে আস্থার সঞ্চার করা, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং তা ধরে রাখা, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক অবস্থায় আনা। অর্থ পাচার রোধ এবং হুন্ডির প্রভাব কমানোও বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অতীতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কেন কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যায়নি, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে।
দেখা যাচ্ছে, ডলার সংকট মোকাবিলা করে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা এবং বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হলেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না; বরং অর্থনীতিতে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দেশে ১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। এত দীর্ঘ সময় মূল্যস্ফীতি মাত্রাতিরিক্ত থাকায় অর্থনীতিতে বড় ক্ষতের সৃষ্টি করেছে, যার ফলে সবচেয়ে কষ্টে আছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের ভোক্তারা। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, ডিসেম্বরের মধ্যে ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করতে হবে। এর কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে চিন্তিত বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা। এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে ২০২৬ সাল থেকে আমাদের আরও কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর কিছু আগাম প্রভাবও পড়তে পারে। এ বিষয়েও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। অর্থ পাচার, হুন্ডি, খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধানে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কেন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না, এটিও এক প্রশ্ন। এসব সংকট থেকে উত্তরণ এখন অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যে সুদের হার কমানো উচিত। একইসঙ্গে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দক্ষ কর্মী তৈরি করার পদক্ষেপও নিতে হবে।