‘কেন্দ্র বলছে যে তিস্তার পানি দিয়ে দেবো। তিস্তায় পানি আছে, যে দেবে? তিস্তার পানি দিলে উত্তরবঙ্গের একটা লোকও খাবার পানি পাবে না।’ সোমবার (৮ জুলাই) এমন রাজ্য সচিবালয়ের এক বৈঠকে এমন মন্তব্য করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
কয়েকদিন ধরেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল, পার্বত্য রাজ্য সিকিম ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভুটানে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। সিকিম ও ভুটানে প্রবল বৃষ্টির ফলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের সমতলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় সোমবার পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় ‘নবান্নে’ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন মমতা। সেখানেই তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাতকার নিয়ে আবারও সমালোচনা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যখন আমাদের চুক্তি হয়েছিল, তখন কথা হয়েছিল যে বাংলাদেশে যে পানিটা যাচ্ছে, তা পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে আমাদের এখানে যাতে কোনো সমস্যা না হয়। সে কারণে এখানে ড্রেজিং করা হবে। অন্যদিকে, গঙ্গার ভাঙ্গনে যেসব বাড়ি তলিয়ে গেছে, সেসব বাড়ি আবার তৈরি করে দেওয়া হবে। এ উদ্দেশ্যে ৭০০ কোটি রুপির একটি প্যাকেজও হয়েছিল।
‘আমি তখন সাংসদ সদস্য ছিলাম, তাই পুরো বিষয়টিই জানতাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার আজও সেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো আমাদের না জানিয়ে ফারাক্কা চুক্তি রিনিউ করবে বলছে। আবার গঙ্গা ড্রেজিং করে না বলে বিহারও ভেসে যায়। তবে বেশি ক্ষতি হয় আমাদের।’
সম্প্রতি শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের সমালোচনা করে বলেন, ভারত-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কথা হলো, কিন্তু আমাদের জানানো হলো না। এটা খুবই দুঃখজনক। আগে আমাকে ইন্দো-বাংলাদেশ বৈঠকে ডাকা হতো, কিন্তু এখন আর ডাকে না।
‘আবার কেন্দ্র বলছে, তিস্তার পানি দিয়ে দেবে। তিস্তায় পানি আছে যে দেবে? তিস্তার পানি দিয়ে দিলে উত্তরবঙ্গের একটা লোকও খাবার পানি পাবে না। অন্যদিকে, আত্রাই নদীর ওপরে বাঁধ দেওয়ায় পানির সমস্যা হয়েছে। বর্ষার পানি দেখে যেন গ্রীষ্মের পানির কথা আমরা না ভাবি।’
এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা পার্শ্ববর্তী রাজ্য সিকিম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, সিকিম ১৪টি হাইডেল পাওয়ার তৈরি করেছে। সেগুলোর মাধ্যমে তারা সব পানি টেনে নিয়েছে। সিকিম যখন এসব হাইডেল পাওয়ার করলো, তখন কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত ছিল এটা করা ঠিক হচ্ছে কি না ভেবে দেখা।
বর্ষা এলেই পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। সোমবারের বৈঠকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু মোকাবিলা নিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সতর্ক করেন মমতা। সতর্ক করেন রাজ্যের মুখ্য সচিবকেও।