যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘নেতৃত্ব দেওয়ার অযোগ্য’ বলে ঘোষণা করেছে দেশটির প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় পরিষদ। তারা বলেছে, তিনি কথা ও কাজে বিপজ্জনক। তিনি দেশের চেয়ে নিজেকে প্রাধান্য দেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা এক নিবন্ধে নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় পরিষদ এমন কথা বলেছে।
আগামী সপ্তাহে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ছিলেন ট্রাম্প। সেই নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় পরিষদ উল্লেখ করেছে, আট বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন।
পরিষদ বলেছে, একসময়ের একটি মহান রাজনৈতিক দল (রিপাবলিকান পার্টি) এখন এক ব্যক্তির (ট্রাম্প) স্বার্থে কাজ করছে। তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি স্পষ্টত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য অযোগ্য। যেসব বিষয় এই দেশকে মহান করে তুলেছে, তার অনেক কিছুর সরাসরি বিরোধী তার মূল্যবোধ, মেজাজমর্জি, ধারণা ও ভাষা।
ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বাছাইয়ের বিষয়কে একটি হতাশা করার মতো সিদ্ধান্ত বলে মনে করে পরিষদ। তারা বলেছে, দুই দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বলে আসছে, তারা দেশ পরিচালনা নিয়ে অসন্তুষ্ট। করোনা মহামারি-পরবর্তী সময়ের লাগামছাড়া মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদের হার, সামাজিক বিভাজন ও রাজনৈতিক স্থবিরতা অনেক ভোটারকে আরও হতাশ করে তুলেছে।
পরিষদ বলেছে, রিপাবলিকান পার্টি একসময় এ ধরনের সমস্যার সমাধানে নির্বাচনী ক্ষমতাকে কাজে লাগাত। দেশ নিয়ে দলটির দৃষ্টিভঙ্গি স্বাধীনতা, ত্যাগ, ব্যক্তিগত দায়িত্ব ও সবার কল্যাণের মতো মূল্যবোধের মধ্যে নিহিত ছিল। এ ক্ষেত্রে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ, জন ম্যাককেইন, মিট রমনির নাম উল্লেখ করেছে পরিষদ। বলেছে, এসব মূল্যবোধ সম্পর্কে দলটির ধারণা, তার দীর্ঘস্থায়ী রক্ষণশীল নীতি এজেন্ডায় প্রতিফলিত হয়েছিল। আজ অনেক রিপাবলিকান অভিবাসন, বাণিজ্য ও কর বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে চিন্তিত নন। কিন্তু এই নির্বাচনের ইস্যু নীতিগত মতপার্থক্য নিয়ে নয়; বরং আরও একটি মৌলিক বিষয় নিয়ে। তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও কমান্ডার ইন চিফের কোন গুণগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পরিষদ বলেছে, ট্রাম্প এমন চরিত্র প্রদর্শন করেছেন, যা প্রেসিডেন্টের দায়িত্বের অনুপযুক্ত। তিনি সংবিধান, আইনের শাসন ও মার্কিন জনগণের প্রতি সম্পূর্ণ অসম্মান প্রদর্শন করেছেন। দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃঢ়প্রত্যয়সূচক দৃষ্টিভঙ্গি তার মধ্যে নেই; বরং তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতার তৃষ্ণা দ্বারা উদ্দীপিত। আর তা হলো, নিজের স্বার্থকে এগিয়ে নিতে, তাড়নাকে তুষ্ট করতে এবং যারা তার সঙ্গে অন্যায় করেছেন বলে তিনি মনে করেন, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিশোধ নিতে সরকারি শক্তির ব্যবহার। সোজা কথায়, তিনি নেতৃত্ব দেওয়ার অযোগ্য।