সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা ঘিরে রেখে তাকে মঞ্চ থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন, তার মুখের ওপর রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, এর মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে তুলে স্লোগান তোলা অদম্য ট্রাম্পের ছবি শুধু ঐতিহাসিক নয়, সেগুলো নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গতিপথ উল্টে দিতে পারে।
রাজনৈতিক সহিসংতার দুঃখনক এ ঘটনা অনিবার্যভাবে নির্বাচনী প্রচারে একটি প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলেই সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিবিসির মার্কিন সহযোগী সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে বলেছেন, তারা এ হামলাকে একটি হত্যাচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। খবর বিবিসির।
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ঘেরাওয়ের মধ্যে রক্তাক্ত ট্রাম্পের মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে তোলার ছবি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন তার ছেলে এরিক ট্রাম্প। ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘এই যোদ্ধাকেই আমেরিকার প্রয়োজন।’
গুলির এ ঘটনার পরপরই টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংতার কোনো স্থান নেই। রিপাবলিকান প্রতিপক্ষের জন্য উদ্বেগ জানান তিনি। পরে বাইডেন টেলিফোনে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
ট্রাম্পের ওপর হামলার পর বাইডেনের প্রচারশিবির সব রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার স্থগিত করেছে। যত দ্রুত সম্ভব সব টেলিভিশন বিজ্ঞাপন বন্ধ করারও উদ্যোগ নিয়েছে। তারা খুব স্পষ্টভাবে এটা উপলব্ধি করতে পেরেছে, এ সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করে কোনো কিছু প্রচার করাটা সঠিক হবে না। তার চেয়ে বরং তারা এ সময়ে ঘটনার নিন্দা জানানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবাই এ হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন। তারা একযোগে বলছেন, গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনো জায়গা নেই।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওমাবা, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন ও জিমি কার্টার—সবাই দ্রুতই সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়েছেন। ট্রাম্প গুরুতর জখম না হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তারা।
তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কিছু মিত্র ও সমর্থকেরা এরই মধ্যে এ ঘটনার জন্য বাইডেনকে দোষারোপ করছেন। রিপাবলিকান দলের একজন কংগ্রেসম্যান এরই মধ্যে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে এ ‘হত্যাচেষ্টা উসকে’ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
ট্রাম্পের সম্ভাব্য ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় সিনেটর জেডি ভেনস রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। তিনি বলেন, বাইডেন শিবির থেকে যেসব রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে, সেগুলোই এ ঘটনার জন্য দায়ী।
অন্য রিপাবলিকান রাজনীতিবিদেরাও একই ধরনের কথা বলছেন। প্রতিপক্ষ শিবির থেকে আসা এসব বক্তব্যের অবশ্যই নিন্দা জানানো হবে। বলা হবে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি কঠিন সময়ে উসকানিমূলক এসব বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ঘটা গভীর দুঃখের একটি ঘটনা নিয়ে এরই মধ্যে যে লড়াইয়ের সূচনা হয়েছে, তা আগামীতে আরও কুৎসিত রূপ নেবে বলেই ধারণা করা যায়। আর এটাই এ নির্বাচনের প্রচারের ধরন বদলে দেবে।