কোটা সংস্কার একটি ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কার চায়। তাদের দাবিকে সম্মান করে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী সব কোটা বাতিল করেন। কিন্তু যখন সাতজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত কোটা বাতিলের সরকারি পরিপত্র বাতিল করেন, তখন সরকারের পক্ষ থেকে অর্থাৎ অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। তার মানে, আন্দোলনকারীদের পক্ষেই সরকার। তবুও সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন ঘিরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি হামলায় ১৬ জুলাই ছয়জন নিহত হয়েছেন। যা খুবই দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন বর্তমানে যে রূপ নিয়েছে, তাকে অরাজনৈতিক আন্দোলন বলা যাবে না। বরং এটা পর্যায়ক্রমে সহিংস হয়েছে এবং এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও স্পষ্ট হচ্ছে। বলতে হয়, যারা এই সরকারের বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ কার্যকর আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি, তারাই এ আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একটা বক্তব্য ধরে যেভাবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলো, সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত। প্রধানমন্ত্রীর কথাটি খুবই স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, আজকে যে কোটা নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, সেই কোটার সুবিধা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতিরা না পেলে কারা পাবে? মানে তিনি একটা প্রশ্ন তুলেছেন– মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি তো কোটা পাবে না। তাহলে কি রাজাকারদের সন্তান বা নাতিরা পাবে? যারা আন্দোলন করছে, তিনি তাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন। কিন্তু তিনি কখনোই বলেননি, যারা আন্দোলন করছে বা যারা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে, তারা বা তাদের ভাইবোনেরা রাজাকার। এটা তিনি বলেননি।
আমরা দেখেছি, কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীরা কোনো সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়নি। অথচ এ আন্দোলনের এই পরিণতি কেন হলো? গতকাল মঙ্গলবার আমরা দেখলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় যখন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মো. আবদুল মুহিত সেই এলাকায় গেলে তার ওপর চড়াও হয় আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থীরা মারধর করবে– এটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
কোটা বর্তমান সরকার পুনর্বহাল করেনি। বরং শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার সরকার কোটা বাতিল করেছিল। বাতিলের পর কোটাহীনভাবে সরকারি ও অন্যান্য চাকরিতে নিয়োগ হচ্ছে। সম্প্রতি হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন কোটা পুনর্বহালের জন্য। সুপ্রিম কোর্ট সেটি স্থগিত করেছেন। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আদালতের রায়ের বিরূদ্ধে গিয়ে বা বিচারাধীন বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তাহলে আদালত অবমাননা হবে। এসব বুঝেও যারা জনভোগান্তি ঘটাচ্ছেন, জনগণের ভোগান্তি যাতে না ঘটে, সেজন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর। আমরা আশা করব, শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।