চলমান পরিস্থিতিতে চারদিন বন্ধ থাকার পর বিকল্প ব্যবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরে শুরু হয়েছে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া। কাস্টমসে বিকল্প ব্যবস্থায় আমদানি–রপ্তানির নতুন চালান শুল্কায়নের মাধ্যমে পণ্য খালাস থেকে রপ্তানি পণ্য জাহাজিকরণ হয়েছে।
২৪ জুলাই (বুধবার) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়েছে। এতে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমও চালু হয়েছে। কাস্টমস থেকে যেসব পণ্য শুল্কায়ন হচ্ছে, সেগুলো আমরা ডেলিভারি দিচ্ছি। এজন্য কাস্টমসের সঙ্গে আমরা সমন্বয় করে কাজ করছি। বন্দর কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বলেন, ‘চারদিন বন্ধ থাকার পর বিকল্প ব্যবস্থায় কাস্টমসে অনলাইন চালু করা হয়েছে। এখন যে কেউ কাস্টমস হাউসে এসে আমদানি–রপ্তানির চালানের নথি জমা দিতে পারবেন। বাইরের কনটেইনার ডিপোগুলোতেও শুল্কায়ন কার্যক্রম চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানি পণ্য নিয়ে আসা জাহাজ যাতে সাগরে অপেক্ষা করতে না হয়, সে জন্য সনাতন পদ্ধতিতে আমদানির আইজিএম (প্রাথমিক বিবরণীর তালিকা) অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত (মঙ্গলবার) ১৩টি জাহাজের আইজিএম অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে এসব জাহাজ থেকে বন্দর জেটিতে পণ্য খালাসে বাধা নেই।’
প্রায় ১০ বছর আগে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অটোমেশন ব্যবস্থা হিসেবে সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড চালু হয়। এরপর থেকে ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে অনলাইনে আমদানি–রপ্তানির পণ্য ঘোষণা দিতেন। অনলাইনের পাশাপাশি কাস্টমস হাউজেও নথিপত্র জমা দিতেন। এরপর কাস্টমসে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে কাস্টমস কর্মকর্তারা শুল্কায়ন করতেন। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় চালানের কোনো নথি অনলাইনে জমা দিতে পারেননি সেবাগ্রহীতারা। এতে পণ্যের শুল্কায়ন বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তিতে বিশেষ পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সক্রিয় করা হয়। এরপর থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের চারটি কম্পিউটারে অনলাইনে সেবা দেওয়া হয়।
কাস্টমস হাউজ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে প্রতিদিন গড়ে ১২০০ আমদানি চালান এবং ছয় হাজার রপ্তানি চালান শুল্কায়ন হয়। নতুন ব্যবস্থায় সেই পরিমাণ শুল্কায়নের সুযোগ কম। সোমবার ৯ হাজার ৭১৪টি রপ্তানি চালানের শুল্কায়ন হয়েছে। এসব চালানে থাকা ১৮ হাজার ৮০৯ টন পণ্য রপ্তানিও হয়েছে। এসব চালানের সিংহভাগ ইন্টারনেট সেবা বন্ধের আগে অনলাইনে নথি দাখিল করা হয়েছিল। আর ৫৫টি আমদানি চালানের শুল্কায়ন হয়েছে। এসব চালানে থাকা ৭৬ হাজার ৫০০ টন পণ্য খালাস হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বিকেল চারটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে এসে আমদানি রপ্তানি পণ্যের ম্যানুয়ালি ২২৪টি চালানের নথি জমা দিয়েছেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা।
এদিকে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে কর্মকর্তারা অফিস করলেও পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ কর্মীদের উপস্থিতি কম দেখা যায়। ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার আগে যেসব আমদানি ও রপ্তানি চালানের নথিপত্র অনলাইনে জমা দেওয়া হয়েছিল কিংবা শুল্কায়ন হয়েছে, সেসব চালানের বড় অংশই আটকে ছিল এত দিন। এখন এসব চালান শুল্কায়নের প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ করছে কাস্টমস।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, দেশে কারফিউ চলমান থাকায় এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় রোববার ও সোমবার বন্দর থেকে কনটেইনারের কোনো পণ্য খালাস হয়নি। তবে আমদানি পণ্যভর্তি ১৫২৫ টিইইউএস’স (২০ফুট এককের) কনটেইনার বন্দর থেকে বেসরকারি ডিপোতে নেওয়া হয়েছে। ইপিজেডগুলোতে (রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল) নেওয়া হয়েছে ৬৫ টিইইউএস’স কনটেইনার। চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে আমদানির ৪২ হাজার ১২০ একক কনটেইনার রাখার জায়গা আছে। সেখানে মঙ্গলবার ৪০ হাজার কনটেইনার ছিল। এতে নতুন করে বন্দরে আসা জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠা-নামা ও স্থানান্তরে জট দেখা দিয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস ও লাইটারিং চলছে। বন্দর জানিয়েছে, বহির্নোঙর থেকে সোমবার রাতেই ৭৯ হাজার টন এবং তার আগে রোববার ১ লাখ ১৬ হাজার টন পণ্য খালাস হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতিতেও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সব অংশীজন চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল রাখার জন্য প্রস্তুত। চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে পণ্যের শুল্কায়ন করে দিলে বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। খালাস পণ্য যানবাহনের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের অন্য স্থানে পৌঁছানোর জন্য নিরাপত্তার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।