কোটা সংস্কার আন্দোলনে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নানা দুর্বলতা বেরিয়ে এসেছে। দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা সমাধানের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং দলীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ সভায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক একাই নেতাদের দিকনির্দেশনা দেন। তবে গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত থাকলেও তাঁদের উদ্দেশে কোনো বক্তব্য দেননি আওয়ামী লীগের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় যত বৈঠক হয়েছে, প্রতিটি বৈঠকের পরই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি কর্মসূচির বাইরে দলীয় বক্তব্য তুলে ধরতে সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হতো। এবারই ব্যতিক্রম হলো। গত শুক্রবার রাতে কারফিউ জারির আগে ১৪ দলের বৈঠক শেষে গণভবনের সামনে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। পরদিন সকালে দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে একটি লিখিত বক্তব্য পড়েন। সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি। অন্যান্য সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের ভিত্তিতে সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, কারফিউ জারির পর দলীয় উচ্চপর্যায় থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের বাইরে অন্যদের কথা বলার বিষয়ে নিষেধ করা হয়। এ জন্য গত শনিবার থেকে চার দিন ধরে ওবায়দুল কাদের নীরব রয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমে কোনো কথা বলছেন না।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবার ভিড়
গতকাল বেলা একটায় কারফিউ শিথিল হওয়ার পরই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে জমায়েত হতে থাকেন। কেন্দ্রীয় নেতারা গাড়িতে করে আসেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক কর্মী মোটরসাইকেল নিয়ে হাজির হন। এ সময় অনেক নেতা-কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় যখন ঢাকা অরক্ষিত হয়ে পড়ে, তখন এসব নেতা-কর্মী কোথায় ছিলেন? বিশেষ করে ছাত্রলীগের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন অনেকেই। অনেককেই বলতে শোনা গেছে, সুবিধাজনক সময় এলে এক দল নেতা–কর্মীর ভিড় বেড়ে যায়।
একটি সহযোগী সংগঠনের মধ্যম সারির এক নেতার মুখ থেকে অনেকটা আহাজারি শোনা গেল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বেহাল দশা বেরিয়ে এসেছে। হাতে গোনা কিছু নেতা-কর্মী ছাড়া অধিকাংশকেই মাঠে দেখা যায়নি। অথচ তাঁরা যেকোনো দলীয় কর্মসূচিতে চেয়ার দখলে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকেন। নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলা এবং টেলিভিশন ক্যামেরায় নিজের প্রচারে ব্যস্ত থাকেন। এটা খুবই লজ্জার। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে অনেক কাজ করতে হবে।
সাংগঠনিক দুর্বলতা
গতকাল বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, ওবায়দুল কাদেরও তাঁর বক্তব্যে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধি এবং দলের নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা বলেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ফলে সবাইকে এখন থেকেই দল শক্তিশালী করার বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। আন্দোলনের সময় সবচেয়ে বেশি সংঘাত হয়েছে যাত্রাবাড়ী এলাকায়। যা ঢাকা-৪ ও ঢাকা-৫ আসনে পড়েছে। এই দুই এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে আজ তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সবাইকে কারফিউ মেনে চলারও নির্দেশনা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক।
সূত্র আরও জানায়, ওবায়দুল কাদের সংঘাতের ছবি ও ভিডিও থাকলে তা সরবরাহ করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন। এর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারবে।
যৌথ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।