কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে কয়েক দিন ধরে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী যে তাণ্ডব চলেছে, তা নজিরবিহীন। সরকারের বেসামরিক প্রশাসন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। দেখা গেছে, ধারাবাহিকভাবে সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে; শেষ পর্যন্ত শুক্রবার (২০ জুলাই) রাতে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি করে। অনির্দিষ্টকালের কারফিউ (নির্দিষ্ট সময়ে বিরতিসহ) অব্যাহত রয়েছে। এ সময়েও রাজধানী ঢাকার রামপুরা-বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা ও মিরপুর এবং সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।
কোটা সংস্কারের দাবির মতো একটি অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এই পরিণতি পাবে, তা ছিল অকল্পনীয়। আন্দোলন নিয়ে এত রক্তপাত, এত প্রাণহানি, এত সহিংসতা কখনো বাংলাদেশ দেখেনি। অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এবং সরকারি অফিস ও স্থাপনায় হামলাসহ কয়েক দিন ধরে দেশে যা ঘটছে, তা অগ্রহণযোগ্য। আমরা লক্ষ্য করেছি, কোটা সংস্কার আন্দোলনটি এখন আর অরাজনৈতিক আন্দোলনে আটকে নেই। এর বিস্তৃতি ঘটেছে এবং ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরাতন ভবনসহ হানিফ ফ্লাইওভারে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত করেছে বিটিভি ভবনকে। নরসিংদী কারাগারে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটপাট, ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ কয়েদি নিয়ে যাওয়ার মতো দুর্ধর্ষ ঘটনাও তারা ঘটিয়েছে, এক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। তাদের বর্বরোচিত হামলা থেকে রক্ষা পায়নি সাধারণ পথচারী থেকে শুরু করে সাংবাদিক সমাজ। বিশেষ করে তারা নারী সাংবাদিকদের ওপর অধিকতর চড়াও হয়েছিল।
আমরা মনে করি, এধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের দায়ভার বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি কোটা বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারীরাও কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। আমরা আশা করব, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে যেসমস্ত দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে এবং জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক