যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনমত জরিপে এতদিন সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু সেই অবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। জরিপে ব্যবধান কমিয়ে ট্রাম্পের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস। নির্বাচন থেকে আগেই সরে দাঁড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার জায়গায় ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস অল্প দিনেই জনসমর্থনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছাকাছি চলে এসেছেন। গত বৃহস্পতিবার অন্তত দুটি এবং শুক্রবার একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের ফল নির্ধারণী ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোয় ট্রাম্পের সঙ্গে হ্যারিসের ব্যবধান কমে এসেছে।
এমারসন কলেজ ও দ্য হিল পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ চারটি রাজ্যে ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের ৪৯ শতাংশের বিপরীতে হ্যারিস ৪৪, জর্জিয়ায় ট্রাম্প ৪৮ ও হ্যারিস ৪৬ শতাংশ, মিশিগানে ট্রাম্প ৪৬ ও হ্যারিস ৪৫ এবং পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প ৪৮ ও হ্যারিস ৪৬ সমর্থন পেয়েছেন। উইসকনসিনে ট্রাম্প ও হ্যারিস উভয়ই পেয়েছেন ৪৭ শতাংশ সমর্থন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে এমারসনের জরিপে বাইডেন যে পারফরম্যান্স করেছিলেন, এরই মধ্যে পাঁচটি রাজ্যেই তা ছাপিয়ে গেছেন হ্যারিস। গত রবিবার ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ান বাইডেন। এরপর মনোনয়নের দৌড়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম আসে সামনে। এরপর ২২-২৩ জুলাই জরিপ চালায় এমারসন কলেজ।
নিউ ইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজের জরিপের ফলাফলও প্রকাশ হয় গত বৃহস্পতিবার। দেশব্যাপী নিবন্ধনকৃত ভোটারদের মধ্যে চালানো এ জরিপেও দেখা যায়, ট্রাম্প হ্যারিসের চেয়ে মাত্র ২ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। যেখানে আগে বাইডেনের চেয়ে ৮ শতাংশে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। তিন সপ্তাহ আগে চালানো জরিপে ট্রাম্পের ৪৯ শতাংশের বিপরীতে বাইডেনের ভোট ছিল ৪১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ১ হাজার ১৪২ জনের ওপর পরিচালিত হয় নিউ ইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজের জরিপ।
এদিকে রয়টার্স/ইপসস ন্যাশনাল জরিপে আবার ট্রাম্পের ৪২ শতাংশের বিপরীতে ৪৪ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। এছাড়া গত শুক্রবার প্রকাশিত ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের জরিপ অনুসারেও বাইডেনের চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন তিনি। ৪৯ শতাংশ সমর্থন নিয়ে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান কমিয়ে ৪৭ শতাংশ ভোটারের সমর্থন টেনেছেন তিনি। চলতি মাসের শুরুতে গণমাধ্যমটির জরিপে ট্রাম্পের ৪৮ শতাংশ সমর্থনের বিপরীতে বাইডেন পেয়েছিলেন ৪২ শতাংশ ভোট।
ট্রাম্পের অভিযোগ : যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে আবারও বামপন্থি ও উন্মাদ আখ্যা দিলেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার মিনেসোটায় এক নির্বাচনি সমাবেশে এসব বলেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করবেন কমলা। জননিরাপত্তা, অভিবাসনসহ বিভিন্ন ইস্যুতেও তার সমালোচনা করেন ট্রাম্প। ট্রাম্প আরো বলেন, কমলা হ্যারিস একজন উগ্র বামপন্থি-উন্মাদ। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে, আরও চার বছর চরমপন্থা, দুর্বলতা, ব্যর্থতা, বিশৃঙ্খলা সইতে হবে মার্কিনিদের। আমার বিশ্বাস, কমলার নেতৃত্বে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখবে পৃথিবী। এর আগের নির্বাচনে জালিয়াতি করে জিতেছে ডেমোক্র্যাটরা। এবারও, নিশ্চিতভাবে তারা সেই চেষ্টা করবে। তবে, এবার প্রতিহত করব আমরা।
ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেছেন, এই নভেম্বরে তাকে ভোট দিলে, চার বছরের মধ্যে তাদের আর ভোট দিতে হবে না। অবশ্য এর মাধ্যমে তিনি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। নির্বাচনি প্রচারে এমন একসময়ে তিনি এই বক্তব্য দিলেন, যখন ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রচারে ট্রাম্পকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে অভিযুক্ত করে আসছে। ভোট দিতে হবে না বলতে ট্রাম্প আসলে কী বুঝিয়েছেন, সেটি জানতে চার প্রচারাভিযানের মুখপাত্র স্টিভেন চেউংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে তিনি ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে সরাসরি কিছু বলেননি। চেউং বলেন, ট্রাম্প এই দেশকে একত্রিত করার কথা বলছিলেন এবং দুই সপ্তাহ আগে তাকে হত্যার চেষ্টার জন্য বিভক্ত রাজনৈতিক পরিবেশকে দায়ী করেছেন।
কমলা হ্যারিসের অভিযোগ : ট্রাম্পকে হারাতে যথেষ্ট চড়াই-উতরাই পার হতে হবে বলে স্বীকার করেছেন কমলা হ্যারিস। তবে বলেছেন, তিনি সাদামাটা প্রচার দিয়েই তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থীর ‘হঠকারী মিথ্যা’ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন। নির্বাচনি প্রচারের অংশ হিসেবে শনিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প টেনেসিতে এক বিটকয়েন সম্মেলনে বক্তব্য দেন। একই দিন কমলা হ্যারিস বক্তব্য দেন ম্যাসাচুসেটসে নির্বাচনি তহবিল জোগাড়ের অনুষ্ঠানে। গায়ক ও সংগীত রচয়িতা জেমস টেলর এবং বাদ্যযন্ত্রশিল্পী ইয়োইয়ো মায়ের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানে ঐ মন্তব্য করেন কমলা।
অনুষ্ঠানে কমলা হ্যারিস সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘এ নির্বাচনি লড়াইয়ে আমরা আন্ডারডগ (অপেক্ষাকৃত দুর্বল), তবে জনগণই এ প্রচারের শক্তি।’ তার প্রচারশিবির বলেছে, অনুষ্ঠানটি থেকে তারা ১৪ লাখ ডলার তুলতে পারবে। কমলা বলেন, ‘আমার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু বেপরোয়া মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। তিনি ও তার রানিং মেট (নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট) যা বলছেন, বলুন, এগুলো শুধুই বাগাড়ম্বর।’
ভবিষ্যদ্বাণী : আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে জো বাইডেন নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী জ্যোতিষী। এমনকি কত তারিখে তিনি নিজেকে নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বীতা থেকে প্রত্যাহার করে নেবেন সেটিও বলে দিয়েছিলেন। তার এমন ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। এখন সেই জ্যোতিষী যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। ইন্টারনেটে সবচেয়ে কুখ্যাত জ্যোতিষী হিসাবে পরিচিতি পাওয়া অ্যামি ট্রিপ বলেছেন, তার হিসেব অনুযায়ী পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। অ্যামি ট্রিপ দাবি করেছেন, ট্রাম্প তার সর্বোচ্চ পেশাগত সাফল্য উপভোগ করছেন। ট্রিপ যুক্তি দিয়ে বলেছেন, সামনে এমন কিছু ঘটবে; যা ট্রাম্পকে আরো উন্মত্ত করে তুলতে পারে। তিনি ইতিমধ্যে চলতি মাসেই এক বার হত্যাচেষ্টার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন। চার বছর আগে বাইডেনের জয়ী হওয়ার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন তিনি।