জামায়াত-শিবিরকে আগামীকাল বুধবারের মধ্যে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এটি করা হবে বলেও জানান তিনি।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। এর আগে গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সভায় জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হয় ১৪-দলীয় জোট। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ওই সভা। সভার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের কাছে সভার সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান।
আজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে (আইনমন্ত্রী) নির্দেশ দিয়েছেন আগামীকালের মধ্যে একটি ব্যবস্থা নেওয়ার। তিনি কিছুক্ষণ পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বসবেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন আইনি প্রক্রিয়ায় হবে। যখন সিদ্ধান্ত হবে, তখন বলবেন। তখন সাংবাদিকেরা জানতে চান, ‘তাহলে কি আগামীকালের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত (জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ) হবে?’ জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ।’
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘কালকের মধ্যে যদি সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে তো নির্বাহী আদেশে হবে?’ এর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দলকে যখন নিষিদ্ধ করা হয়, তখন সেটি নির্বাহী আদেশেই হয়।’
এরপর প্রশ্ন করা হয়, ‘তাহলে কি নির্বাহী আদেশেই হচ্ছে (জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ)? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা কোটা আন্দোলন করেছিলেন, তারা কিন্তু বলেছেন, এই সহিংসতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের (সরকার) কাছে তথ্য–উপাত্ত আছে জামায়াত, বিএনপি, ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের যারা জঙ্গি, তারাই এটা (সহিংসতা) করেছে। দলটিকে (জামায়াত) যদি নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও রাজনীতিরও অনেক উন্নতি হবে।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট। ১৪-দলীয় জোটের গতকালের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের শুরুতে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে যে নাশকতা, আগুন দেওয়ার ঘটনা ও পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে, এর পেছনে জামায়াত-শিবির রয়েছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত লোকজনকে ঢাকায় জড়ো করা হয়। তারাই এসব অপকর্ম করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে হলে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর শরিক দলের নেতারা একে একে বক্তৃতা করেন।
উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। দলটির ছাত্রসংগঠনের নাম ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে।