মেঘভাঙা বৃষ্টি, প্লাবন, ভূমিধস ও মৃত্যুর মিছিলে গোটা ভারত বিপর্যস্ত। দক্ষিণ থেকে উত্তর, পশ্চিম থেকে পূর্ব, সর্বত্র এক ছবি। দিনকয়েক আগে দাক্ষিণাত্যের ‘ঈশ্বরের আপন দেশ’ কেরালায় যা শুরু হয়েছিল, তার রেশ ধরে এখন জেরবার উত্তরের দুই পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখন্ড ও হিমাচল প্রদেশ, রাজধানী রাজ্য দিল্লি, মরুরাজ্য রাজস্থান ও গোটা উত্তর–পূর্বাঞ্চল। খবর হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভির।
কেরালার ওয়েনাড, যেখান থেকে রাহুল গান্ধী লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন, কয়েক দিন ধরেই খবরে। প্লাবন ও ভূমিধসে সেখানে ঠিক কতজন মারা গেছেন, এখনো সেই হিসাব সরকারের কাছে নেই। উদ্ধারকারী দল প্রায় ৩০০ মরদেহ খুঁজে পেয়েছে। বড় বড় পাথরের নিচে এখনো কত মরদেহ আটকে আছে, কেউ জানে না। আহত মানুষের সংখ্যা দুই শতাধিক। নিখোঁজ আড়াই শ। নিঃস্ব হয়েছেন আরও তিন শতাধিক। তাদের পুনর্বাসনের চিন্তা এই মুহূর্তে কেরালার বামপন্থী সরকারের মাথাব্যথা।
পাহাড়ভাঙা বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে ওয়েনাডের মুন্ডাক্কাই, চূড়ালমালা, নুলপুঝা ও আত্তামালা গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ‘ইসরো’ থেকে প্রচারিত এক উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, ধস নেমেছিল ৮৬ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে। সেই ধস ও বৃষ্টির তোড়ে ভেসে যাওয়া গাছপালা, পাথর, কাদামাটির তলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ওই চার গ্রাম। আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই ধ্বংসলীলা থামে এক নদীতে।
প্রায় সাত দিন ধরে সেখানে যৌথভাবে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন ভারতীয় সেনাবাহিনী, বিপর্যয়রোধ বাহিনী (এনডিআরএফ), নৌসেনা ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা। অবিরাম বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়ার দরুন উদ্ধারকাজ বারবার ব্যাহত হলেও পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে আনা সম্ভব হয়েছে।
এ অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা উপদ্রুত এলাকা ঘোরেন। উদ্ধারকারী দলকে উৎসাহ দেন। ত্রাণশিবিরে আশ্রয় পাওয়া মানুষের পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেন। এই বিপর্যয়কে তারা জাতীয় বিপর্যয় বর্ণনা করে বলেন, কেন্দ্রের উচিত রাজ্য সরকারকে সর্বোতভাবে সহায়তা করা।
দক্ষিণের এই অতিবৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পায়নি উত্তর ভারতও। প্রবল বর্ষণের কারণে উত্তরের ৭ রাজ্যে গতকাল পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ৪২ জন। এর মধ্যে শুধু উত্তরাখন্ডেই মারা গেছেন ১২ জন। প্লাবন ও ভূমিধসের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চার ধাম যাত্রা। আটক তীর্থযাত্রীদের উদ্ধারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।
হিমাচল প্রদেশে বিভিন্ন জায়গায় মারা গেছেন পাঁচজন। মানালি–চন্ডীগড় জাতীয় সড়ক জায়গায় জায়গায় ভেঙে গেছে। কুলু, মানালি ও মান্ডিতে জারি হয়েছে রেড অ্যালার্ট। বিপাশা নদী ফুঁসছে। নদীর দুই পাড়ের বহু স্থাপনা তলিয়ে গেছে।
বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়নি রাজধানী রাজ্য দিল্লিও। ১ দিনে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হওয়ায় জলমগ্ন হয়ে গেছে বহু এলাকা। পানির মধ্যে পড়ে থাকা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল–কলেজ।