সেলিন ডিওনের ফেরা

মত ও পথ ডেস্ক

সেলিন ডিওন। সংগৃহীত ছবি

তাঁর কণ্ঠস্বর বিশ্বের প্রতিটি মানুষের চেনা। ১৯৯৭ সালে উদাত্ত কণ্ঠে গেয়েছিলেন, ‘মাই হার্ট উইল গো অন’। টাইটানিক ছবিতে ব্যবহৃত গানটি প্রত্যেক সংগীতপ্রেমীর হৃদয় ছুঁয়েছিল। ঠিক ধরেছেন, কথা হচ্ছে গায়িকা সেলিন ডিওনকে নিয়ে। চলতি বছরের জুনে অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পাওয়া তথ্যচিত্র ‘আই অ্যাম: সেলিন ডিওন’-এ বলেছিলেন, ‘যদি দৌড়াতে না পারি, তবে হাঁটব। হাঁটতে না পারলে হামাগুড়ি দেব। কারণ আমি কোনোভাবেই থামতে চাই না।’ সত্যিই সেলিন ডিওন থেমে থাকাদের মধ্যে পড়েন না।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে জটিল স্নায়ুরোগ স্টিফ পারসন সিনড্রোমে (এসপিএস) আক্রান্তের খবর দেন ৫৬ বছর বয়সী এ গায়িকা। এরপর ডিওনের চেনা দুনিয়া বদলে যায়। রোগের প্রভাবে গাইতে পারতেন না তিনি। এমনকি হাঁটতেও রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে। ডিওন জানান, এসপিএস স্নায়ুর বিরল এক অসুখ। এটিকে এক ধরনের অটোইমিউন ডিজঅর্ডারও বলেন চিকিৎসকরা। গান গাওয়া বা মঞ্চে পারফর্ম করা তো দূর, তাঁর স্বাভাবিক জীবনই ব্যাহত হয়েছে এর ফলে। অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পাওয়া ‘আই অ্যাম: সেলিন ডিওন’-এ এসপিএসের সঙ্গে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতাসহ জীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন গায়িকা।

শরীরের সায় মিলছিল না। তবু মঞ্চে ফিরতে মরিয়া ছিলেন ডিওন। ফিরলেনও। গত শুক্রবার প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে অলিম্পিকের উদ্বোধনী আয়োজনে চমক নিয়েই হাজির হলেন এই কানাডিয়ান গায়িকা। সাদা রঙের গাউনে অভিজাত লুকে মঞ্চে আসেন ডিওন, যেন পাশ্চাত্য সংগীতের রানীর প্রত্যাবর্তন!

২০২০ সালের মার্চে নিউ জার্সিতে শেষবারের মতো কনসার্ট করেন তিনি। মাঝে করোনাভাইরাস, এরপর জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আর মঞ্চে ওঠেননি। সব মিলিয়ে চার বছর পর মঞ্চে গাইলেন গ্র্যামিজয়ী এ গায়িকা। বেশ কয়েক বছর ধরেই ডিওনের গানের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ভক্তরা। ফলে তাঁকে মঞ্চে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হন দর্শকরা। মঞ্চে এসে ফরাসি সংগীতশিল্পী এদিথ পিয়াফের ‘হিম টু লাভ’ পরিবেশন করেন ডিওন।

সাধারণ মানুষ থেকে প্রধানমন্ত্রী– ডিওনের গানের অনুরাগীদের তালিকায় কে নেই! ডিওনকে মঞ্চে দেখে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘ডিওন একজন কানাডিয়ান আইকন, দুর্দান্ত শিল্পী। তোমাকে মঞ্চে দেখে খুব ভালো লাগছে।’

ইতালিয়ান সংগীতশিল্পী লরা পৌসিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় সেলিন ডিওনকে শুনতে শুনতে আমার চোখ অশ্রুতে ভরে আসে। আমি সত্যিই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।’ শো শেষে ডিওন লিখেছেন, ‘প্যারিস অলিম্পিকে গান গাইতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। প্যারিস আমার প্রিয় শহর। এ শহরে ফেরাটা আমার জন্য সব সময় আনন্দের।’

বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এ গায়িকার জীবনে এর আগেও অনেক ঝড় এসেছে। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী রেনে অ্যাঞ্জেলিলের ক্যান্সার ধরা পড়লে নিজের ক্যারিয়ার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিরতি নিয়েছিলেন সেলিন। তার এক বছর পর গায়িকা আবার গানের জগতে ফিরে আসেন। কিন্তু ২০১৬ সালে স্বামী অ্যাঞ্জেলিল ও ভাই ড্যানিয়েল ডিওনের মৃত্যুতে তিনি ফের গান থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। ২০১৯ সালে স্টুডিও অ্যালবাম ‘কারেজ’ নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেন গায়িকা। অ্যালবামটিতে তাঁর সঙ্গে আরও গেয়েছেন সিয়া, স্যাম স্মিথ ও ডেভিড গুয়েটার। এরপর বিরল ব্যাধিতে আক্রান্ত হন গায়িকা।

চার দশকের বেশি সময় ধরে গান গাইছেন সেলিন ডিওন। বিশ্বের শীর্ষ গায়িকাদের একজন তিনি। এ পর্যন্ত তাঁর অ্যালবাম ২৫০ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে আছে ‘দ্য পাওয়ার অব লাভ’, ‘থিঙ্ক টোয়াইস’, ‘বিকজ ইউ লাভড মি’, ‘ইটস অল কামিং ব্যাক টু মি নাউ’, ‘দ্যাটস দ্য ওয়ে ইট ইজ’, ‘অ্যাই অ্যাম অ্যালাইভ’ ইত্যাদি।

শেয়ার করুন