বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার সন্ত্রাসীরা ৩৯ জেলায় জনপ্রতিনিধিদের বাসাবাড়ি, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, থানাসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সকাল থেকেই দেশের নানা স্থানে সন্ত্রাসীরা মিছিল নিয়ে রাস্তায় বের হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। আগুন সন্ত্রাসীরা কমপক্ষে ১৪টি স্থানে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসভবন ও নিজস্ব কার্যালয় হামলা, ভাঙচুর এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
আওয়ামী লীগের অন্তত ২০টি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। কমপক্ষে ১১টি জেলায় সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, থানা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এর আগে শনিবার চট্টগ্রাম নগরে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসায় হামলার পর বিএনপির চার নেতার বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শহরের পিটিআই সড়কের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সরেজমিনে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সামনে বিভিন্ন ধরনের ফুলের টব, তৈরি করা নৌকা সড়কের ওপর পড়ে আছে। নিচতলার এসি, জানালা ও গ্লাস ভেঙে পড়ে আছে। পেছনের রান্নাঘর তছনছ করা হয়েছে।
চাঁদপুর শহরের জে এম সেনগুপ্ত রোডে অবস্থিত সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনির বাসায় এবং চাঁদপুর পৌরসভা কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। শহরের কালীবাড়ি পুলিশ বক্সে ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।
বরিশাল নগরের নবগ্রাম রোডে অবস্থিত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুকের বাড়িতে বেলা দুইটার দিকে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় বাড়ির ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। বাড়ির সামনে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের বাসায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। একই সময়ে হুইপের বাসার সামনে পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর ও এগুলোতে আগুন দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও ছররা গুলি নিক্ষেপ করে সন্ত্রাসীদের ছত্রভঙ্গ করেছে। পুলিশের ছররা গুলির আঘাতে অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার কথা জানা গেছে।
গতকাল বেলা একটার দিকে দিনাজপুর শহরের হাসপাতাল মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হুইপ ইকবালুর রহিমের বাসার নিরাপত্তা প্রহরী সুমন মুঠোফোনে বলেন, ‘স্যারের বাড়ির জিনিসপত্র পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। নিচতলায় ও দ্বিতীয় তলায় সব জায়গায় আগুন জ্বলছে।’