৪ আগস্ট (রোববার) সন্ধ্যা ৬টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কারফিউ চলাকালীন বিনা প্রয়োজনে রাজধানী ঢাকার কাউকে ঘর থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। যারা কারফিউয়ের আইন ভঙ্গ করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঢাকা মহানগর পুলিশ এখন পর্যন্ত অত্যন্ত ধৈর্য, সহনশীলতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ কোনো আন্দোলনকারী ছাত্রের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। অগ্নিসংযোগকারী ও পুলিশ হত্যাকারীর বিরুদ্ধে। তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশ আইনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে বাধ্য হবে।’
রোববার (৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যৌক্তিক কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেখানে আন্দোলনকারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে দুর্বৃত্তরা। ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে নজীরবিহীন অরাজকতা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এ সহিংসতায় চরম জনদুর্ভোগের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও হতাহতের মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। এতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার সহানুভূতিশীল হয়ে আটক সাধারণ শিক্ষার্থীদের এরই মধ্যে মুক্তি দিয়েছে। তারপরও শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নাশকতাকারী চক্র গতকাল শনিবার থেকেই ভয়াবহ নাশকতা ও অগ্নিসন্ত্রাস করছে। আজ রোববারও সারাদেশে তারা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।’
দিনভর সংঘর্ষ-তাণ্ডব ও সহিংসতার বিবরণ তুলে ধরে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, বাংলামোটর, মোহাম্মদপুর, কাজলা, উত্তরাসহ বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ ও নজীরবিহীন সন্ত্রাসী হামলা চালায়। তারা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল বোমাসহ সমবেত হয়ে নিরীহ জনগণ ও পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। তাদের নারকীয় তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি দেশের চিকিৎসাসেবার প্রাণকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও। তারা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ভাঙচুর করে ও ভেতরে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সন্ত্রাসীরা রাজধানীর সিএমএম আদালতেও হামলা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা খিলগাঁও থানা, যাত্রাবাড়ী থানা, শাহবাগ থানা আক্রমণ করে এবং ঢাকা শহরে ১০টি পুলিশবক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। কয়েকটি পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের গুলিবর্ষণে ৩ জন পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। ওয়ারী বিভাগের ডিসিসহ ১১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে তারা কেউই ছাত্র নয়, তারা সন্ত্রাসী, তারা জঙ্গি।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই ঢাকা মহানগর পুলিশ অত্যন্ত পেশাদারত্ব ও চরম ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারে। কোথাও যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে।’
‘এ সহিংসতায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এখন পর্যন্ত ডিএমপির ৩৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত ও ৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আজকেও সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় দায়িত্বরত ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অসংখ্য সাংবাদিক হতাহত হন।’
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে যে কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানান ডিএমপি কমিশনার। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পুলিশ বাধ্য হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার (৪ আগস্ট) রাত ১০টা পর্যন্ত ১৪ জন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৭৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে রোববার রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় আটজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের নেতা। তার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তিনি উত্তরায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে নিহত হন। অন্য সাতজনের মরদেহ রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।