গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের ওপর হামলা করে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় রাজধানীর অধিকাংশ থানা ও ট্রাফিক পুলিশ বক্স। এরপর থেকে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় কার্যত কর্মবিরতিতে চলে যান। পুলিশ সদস্যরা যখন কর্মবিরতিতে যান তখন রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। এই ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা।
তারা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের পয়েন্টে পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। গত কয়েকদিন টানা রাস্তায় রোদ বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে জনগণের দুর্ভোগ কমাতে দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব পালন করলেও রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা কিছুটা ব্যাহত হয়। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনায় আবারও দায়িত্বে ফিরছেন পুলিশ সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রাস্তার ট্রাফিক ব্যবস্থা বুঝে নিচ্ছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা।
সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুরোদমে ট্রাফিক ব্যবস্থার দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় নামার পর তাদের স্বাগত জানাচ্ছেন ছাত্র-জনতা। সাধারণ জনগণ বলছেন, আগে যা হওয়ার হয়েছে আমরা চাই এখন পুলিশ সদস্যরা লাঠিয়াল বাহিনী নয় জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে যাবেন।
সোমবার সকালে রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছাত্রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছেন। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যখন রাস্তায় নেমেছেন তখন তাদের আলিঙ্গন করে স্বাগত জানাচ্ছেন ছাত্র-জনতা। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা তাদের চিরচেনা রূপে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভয়হীন মনে রাস্তায় যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন। আর তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন রাস্তায় এক দল শিক্ষার্থী।
আরও দেখা যায়, সরকার পতনের সময় ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলার সময় পুলিশের প্রতি যে বিদ্বেষ ও ক্ষোভ ছিল মানুষের আজ সেটা দেখা যায়নি। সবাই পুলিশ সদস্যদের উৎসাহিত করছেন তারা যেন আতঙ্কহীনভাবে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। তরুণ থেকে বয়স্ক সব শ্রেণীর মানুষজন পুলিশ সদস্যদের রাস্তায় দেখে আনন্দিত হয়েছেন এবং তাদের কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে হাত মিলানো থেকে শুরু করে কুশল বিনিময় করছেন।
আরও দেখা যায়, রাস্তায় দায়িত্বরত শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন এবার আপনারা আমাদেরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। আপনারা যেভাবে জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে রাস্তায় এতদিন কাজ করেছেন আমরা আপনাদের মতই জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য এসেছি। এতদিন রাস্তায় আপনারা শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যে কষ্ট করেছেন সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী, আমতলী, বনানী, বনানী পূজামণ্ডপ, গুলশান-২, গুলশান-১ ও পুলিশ প্লাজা এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।
আরও জানা যায়, গুলশান-১ নম্বর মোড়ে মোট সাত জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন টিআই, দুজন ট্রাফিক সার্জেন্ট ও ৪ জন ট্রাফিক কনস্টেবল। তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা নিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
এর মধ্যে দুপুর ১২টার দিকে গুলশান-১ নম্বর মোড়ে ট্রাফিক ব্যস্ততা পরিদর্শন করতে আসেন ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এ এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি এ সময় রাস্তায় ট্রাফিক শৃঙ্খলার দায়িত্বে কাজ করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের ধন্যবাদ জানান। এছাড়া তিনি এ সময় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন তারা যেন জনগণকে তাদের সর্বোচ্চ সেবাটা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
পরিদর্শনে এসে তিনি বলেন, দায়িত্বে ফিরে আসায় মানুষ আমাদের স্বাগত জানিয়েছে। আমাদের মানুষ সহযোগিতা করছে। মানুষ বলছে, ট্রাফিক পুলিশ ছাড়া ঢাকা শহর অচল। মানুষ বলছে যা হওয়ার হয়েছে, এখন সব কিছু সুন্দর করে চলুক।
এদিকে এতদিন ধরে ট্রাফিক পুলিশবিহীন রাস্তায় শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করে আসা শিক্ষার্থীরাও বলছেন, ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা অপরিহার্য। তারা আরও বলছেন, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ছাড়া রাজধানীর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।
এ বিষয়ে রাজধানীর গুলশানে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, দেশে যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্মবিরতিতে ছিল, দেশে তখন শৃঙ্খলা ছিল না। তখন আমরা ছাত্রসমাজ দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে এসেছি। আমরা চেষ্টা করেছি ঢাকা শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে। তবে আমরা রিয়েলাইজ করলাম ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আসলে ট্রাফিক পুলিশ ছাড়া সম্ভব না। ট্রাফিক পুলিশ ফিরে এসেছে আমরা এখন স্বস্তি অনুভব করছি। ট্রাফিক পুলিশ ফিরে আসায় জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে আশা করছি। পুলিশ আমাদের জন্য কাজ করবে এই আশা করছি।
অন্যদিকে সাধারণ জনগণও বলছেন, পুলিশ আগে যা করেছে, সব ভুলে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। তারা যেন জনগণের জন্য কাজ করে তাহলে জনগণ তাদের ভালোবাসবে। তবে আগের মতো লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করলে জনগণ কিন্তু ক্ষমা করবে না।
এদিকে রাজধানীর আরও কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখনও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা দায়িত্বে ফেরেননি। বিশেষ করে রাজধানীর প্রগতি সরণি এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের দেখা যায়নি। সেখানে শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব পালন করছেন।