গ্রীষ্মকালে প্যারিসের সূর্য ডোবে রাত সাড়ে নয়টার পর। সমাপনী অনুষ্ঠান যখন রাত নয়টায় শুরু হয়েছে তখনও প্যারিসের আকাশে সূর্য। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই দূর-দুরান্তের গ্যালারি থেকে ছবি তোলার প্রয়াস। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আইওসি সভাপতি টমাস বাথ সহ আরো অনেকের সঙ্গে করমর্দন করছেন। এই দৃশ্য ধারণের চেষ্টা অনেকের।
ঘড়ির কাটা নয়টা বাজতেই শুরু গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠান। প্রথমে শুরু ফরাসি সঙ্গীত দিয়ে। কিছু ডিসপ্লে প্রদর্শনের পর ফ্রান্সের জাতীয় সঙ্গীত। ফ্রান্সের জাতীয় সঙ্গীতের পর গেমসে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো পতাকা নিয়ে মার্চ পাস্ট শুরু করে।
প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদ ছিলেন পাঁচ জন। ক্রীড়াবিদরা সবাই দেশে ফিরে গেছেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পতাকা ছিল গেমসের এক ভলান্টিয়ারের হাতে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সোমালিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশের পতাকা বহন করেছেন গেমসের ভলান্টিয়ার।
বাংলাদেশের পাঁচ ক্রীড়াবিদের মধ্যে স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান ইংল্যান্ডে থাকেন। তাকে সমাপনীতে আনার চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়ায় আসা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। ক্রীড়াবিদরা যেমন নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছেন, তেমনি শেফ দ্য মিশন প্যারিস ছেড়েছেন বাংলাদেশ খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই।
গেমসে পদকজয়ী অনেক ক্রীড়াবিদ সমাপনীতে দেশের পতাকা বহন করেছেন। তাদের অনেকে নিজ নিজ দেশের পতাকা নিয়ে মঞ্চের চার পাশে গোল হয়ে দাঁড়ান। পতাকাবহনকারীদের অবস্থান নেয়ার পর পরই গেমসে কাজ করা ভলান্টিয়াররা প্রবেশ করেন। গেমসের অন্যতম প্রাণ ভলান্টিয়ার। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গেমস সফল ও প্রাণবন্ত হয়। প্রতি গেমসেই সমাপনীতে ভলান্টিয়ারদের সম্মান জানান হয়। ভলান্টিয়ারদের উপস্থিতির মধ্যেই প্যারিসে অবস্থানকারী অনেক অ্যাথলেট মাঠে প্রবেশ করেন। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয় পুরো স্টেডিয়াম।
সবার উপস্থিতিতে গান ও আলোর ঝলকানিতে তৈরি হয় উৎসব মুখর পরিবেশ। দুই সপ্তাহের মাঠের লড়াই ভুলে অ্যাথলেটরা সবাই এক সুরে দুলছেন ও নাচছেন। স্তাদে দ্য ফ্রান্সে যেন পুরো বিশ্ব এক হয়েছে এই ক্ষণে এসে। বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনাল ও অলিম্পিক গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজনের বিশেষ কৃতিত্ব এই ভেন্যুর।
সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্যেই নারী ম্যারাথনের পুরস্কার প্রদান হয়। আইওসি সভাপতি টমাস বাখ ও বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সভাপতি সেবাস্তিয়ান কো দুই জন উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের পদক প্রদান করেন। নেদারল্যান্ড স্বর্ণ জেতায় তাদের জাতীয় সঙ্গীত বাজে। এরপর গত দুই সপ্তাহের গেমসের নানা মুহূর্ত ডিসপ্লে করা হয়। অ্যাথলেট কমিশনের নতুন চার সদস্য হিসেবে আমেরিকান দৌড়বিদ অ্যালিসন ফেলিক্স, জার্মান জিমন্যাস্ট কিম বুই, অস্ট্রেলিয়ানন ক্যানন জেসিকা ফক্স, কিউই টেনিসের মার্কুস ড্যানিয়েলকে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
এরপর শুরু হয় মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। স্তাদে দ্য ফ্রান্সের মাঠের মাঝখানে মঞ্চে বংশীবাদকরা বাঁশি বাজান। কিছুক্ষণ পর চলতে থাকে আলো ও শব্দের খেলা। পনেরো মিনিটে আলো-শব্দ-প্রযুক্তির খেলায় বুঁদ হয়ে থাকেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত সবাই। প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্যালারিতে আলো-আধারে পিক্টোগ্রাম। শূন্যে থেকে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন বাদকরা। অলিম্পিকের লোগো পাঁচ বৃত্তও ছিল সমাপনীর মঞ্চে। উদ্বোধনী-সমাপনী অনুষ্ঠান মানেই আতশবাজি পোড়ানো, শব্দের ঝনঝনানি। এই দুই থেকে বেরিয়ে নতুন ধারণা দিয়েছে প্যারিস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঐতিহাসিক হলেও বৃষ্টিতে ক্রীড়াবিদ-দর্শক-সাংবাদিক সবার ভোগান্তি হয়েছে। সমাপনী অনুষ্ঠানে স্টেডিয়ামে চোখের সামনেই সবকিছু হওয়ায় বেশি উপভোগ্য হয়েছে। বিশেষ করে দৃষ্টিনন্দন আলোর নাচন মন কেড়েছে সবার।
আলো-গানের পর হয়েছে কিছু আনুষ্ঠানিকতা। আইওসি সভাপতি টমাস বাথ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। পরবর্তী গেমসের ভেন্যু লস অ্যাঞ্জেলসের হাতে পতাকা হস্তান্তর হয়েছে। বিদায় প্যারিস, স্বাগত লস অ্যাঞ্জেলস।