ডিবিসি নিউজ টেলিভিশনের সম্পাদক প্রনব সাহাকে সরিয়ে জায়েদুল আহসান পিন্টু নিজেকে চ্যানেলটির একক সম্পাদক হিসেবে দাবি করছেন। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
জায়েদুল আহসান পিন্টু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘হত্যাকারী’ উল্লেখ করে ‘রহস্যময় গণঅভ্যুত্থান’ এবং ‘রক্তপিচ্ছিল অন্ধকার’ নামে বিতর্কিত একাধিক বই লিখেছেন। এসব বইয়ের প্রচারণা খোদ আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। বিদেশি কূটনীতিকদের দেওয়ার জন্য এসব বই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। এছাড়া জিয়াউর রহমানকে ইতিহাসের ‘ঘৃণ্য হত্যাকারী’ বলে সাংবাদিক জায়েদুল আহসান পিন্টুর বক্তব্য ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে। আওয়ামী লীগের সরকারকে খুশি করতে অসংখ্যবার পিন্টু জিয়াউর রহমানকে ‘হত্যাকারী’ বলেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পরিচালিত ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের’ (সিআরআই) অন্যতম প্রধান জায়েদুল আহসান পিন্টু। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি রেদওয়ান সিদ্দিক ববির বন্ধু। এসব অভিযোগে পিন্টুসহ কয়েকজনের বিচারও চাওয়া হয়েছিলো শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহল থেকে।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এবং বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম-আর্থিক অপরাধ ওঠায় জায়েদুল আহসান পিন্টুকে আপাতত অফিসে আসতে নিষেধ করেছিলো ডিবিসি নিউজের মালিকপক্ষ। পরে দুজন সাংবাদিক নেতার দ্বারস্থ হন পিন্টু। ওই দুইজন সাংবাদিক নেতা আরেক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নেতার সঙ্গে পিন্টুকে কথা বলিয়ে এককভাবে সম্পাদকের চেয়ারে বসানোর আশ্বাস দেন।
প্রনব সাহাকে সম্পাদক পদ থেকে সরানোর বিষয়ে ডিবিসির একজন অভিযোগ করেন, ‘নিউজ রুমে তিনি ডিবিসির সিনিয়র রিপোর্টার কোহেরিন ফারহানাজের গায়ে হাত দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।’
এ বিষয়ে ডিবিসি নিউজের একাধিক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। কারণ, নিউজ রুমে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে অভিযোগ তুলে প্রনব সাহাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
ডিবিসির একজন সিনিয়র নিউজরুম এডিটর বলেন, ‘নিউজ রুমে এখন পিন্টু তার মামা শ্বশুর অন্তর্বতী সরকারের একজন উপদেষ্টা বলে পাওয়ার প্র্যাক্টিস করছেন। কথায় কথায় বলছেন, তার মামা শ্বশুর উপদেষ্টা।’
পিন্টুর নিপীড়নের শিকার ডিবিসির একজন কর্মী বলেন, প্রয়োজনে আমরা অন্তর্বতী সরকার প্রধানের কাছে যাবো। এ কারণে যে পিন্টুকে কোনো উপদেষ্টা এসব সুযোগ দিয়েছেন কী না! তিনি বলেন, পিন্টু দায়িত্ব নেওয়ার পর তার রুমের দরজা বন্ধ করে তার সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে ক্লোজ ডোর মিটিং হচ্ছে।
এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে, জায়েদুল আহসান পিন্টু একক সম্পাদক হওয়ার পর এরই মধ্যে প্রযোজনা বিভাগ, বার্তা এবং রিপোর্টিং বিভাগে ছাটাইয়ের খসড়া তালিকা করা হয়েছে।
এরই মধ্যে গত শনিবার একক সম্পাদক হওয়ার পর রোববার একজন বার্তা সম্পাদককে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে ডিবিসি নিউজের সিনিয়র জুনিয়র আরো কয়েকজন কর্মীকে বাদ দেওয়া হবে বলে পিন্টুর ঘনিষ্ঠ দুজন সাংবাদিক নিশ্চিত করেন।
পিন্টুর স্ত্রী একাত্তর টিভির উপস্থাপিকা শবনম আজিম। তিনি আওয়ামী লীগের সিআরআইএর অন্যতম সমন্বয়ক। এছাড়া ‘সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের’ (সিসার্ফ) প্রধান পিন্টুর স্ত্রী শবনম আজিম। তার স্বামী পিন্টুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু পুলিশের প্রভাবশালী আইজি মনিরুল ইসলামের (বর্তমানে বাধ্যতামূলক অবসরে) মাধ্যমে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ও প্রচারণার বিজ্ঞাপনমূলক সব কাজ প্রভাব বিস্তার করে সিটিটিসিসহ পুলিশ সদর দফতরের সব প্রজেক্ট নিয়েছেন। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পুলিশের নানা প্রজেক্টের কাজ বাগিয়ে নিতেন পিন্টু-শবনম দম্পতি। এসব বিষয়ে পিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে ডিবিসি নিউজের টেলিফোন নম্বরে। কিন্তু তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।