একাত্তর টেলিভিশন থেকে চাকরিচ্যুত হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ ও প্রিন্সিপাল করেসপনডেন্ট ফারজানা রুপার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় পোশাককর্মী ফজলুল করিম হত্যা মামলায় তাদের এ রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) আদালতে হাজির করে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহম্মদ হুমায়ুন কবির তাদের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট আসামিদের নির্দেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী এবং অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা দলবদ্ধভাবে একত্রিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে শটগান, পিস্তল, রিভলবারসহ অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিত গুলি চালায়। সেখানে বাদী আনোয়ার হোসেনের ভাই ফজলুল করিমসহ অনেক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হন। বাদীর ভাইয়ের ডান পাশে বুকের সামান্য নিচে গুলি লাগে এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
আন্দোলনে থাকা বাদীর আরেক ছোট ভাই মো. জিলানি (২২) সহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থী-জনতা ফজলুল করিমকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল নিয়ে যান। অনেক শিক্ষার্থী-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে ওইদিন ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভিড় করেন। এতে বাদীর ভাইকে রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তি থাকা অবস্থায় বাদীর ভাইকে আইসিউতে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাদীর ভাই জিলানি হাসপাতালে থাকাকালীন খবর পেয়ে তার ভাইকে শনাক্ত করেন। এরপর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পারেন তার ভাইয়ের ডান পাশের বুকের নিচে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে গুরুতর আঘাত পান। এর ফলে তার মৃত্যু হয়। গোপন সূত্রের মাধ্যমে বাদী জানতে পারেন, আসামীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের কঠোর হস্তে দমন করতে উসকানি দেন। তাদের পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করা যাবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট পোশাককর্মী ফজলুল করিম নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত ফজলুলের ভাই আনোয়ার হোসেন উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় সাবেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৯ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী মো. আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ডিএমপির সাবেক কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিআইজি খালিদ হাওলাদার, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক এমপি খসরু প্রমুখ।
মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট থেকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আমার ছোটভাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়। আন্দোলনরত অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বর্ণিত আসামিদের নির্দেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা একত্রিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। সেখানে আমার ভাইসহ অনেক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হন। আমার ভাইয়ের বুকের ডান পাশের সামান্য নিচে গুলিবিদ্ধ হলে সে তাৎক্ষণিক মাটিতে পড়ে যায়। এরপর চিকিৎসার জন্য কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৯টা ১৯ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তি থাকা অবস্থায় আমার ভাইকে আইসিউতে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল বুধবার সকালে শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের আটক করে ডিবিতে হস্তান্তর করে।
এর আগে গত ৮ আগস্ট একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে মুস্তফা আজাদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, একাত্তর মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ৮ আগস্ট থেকে শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
গত ১৪ জুলাই চীন সফর শেষে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করেছিলেন একাত্তর টেলিভিশনের ফারজানা রুপা। তার প্রশ্নটি ছিল, কোটা আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে প্রতিনিয়ত অবমাননাকর বক্তব্য রাখা হচ্ছে। এই অবমাননা মুক্তিযোদ্ধারা সহ্য করতে পারছেন না। রাষ্ট্রের কিছু করণীয় আছে কি না?
এমন প্রশ্নের পর ফারজানা রুপার ব্যাপক সমালোচনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা। পরে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ফারজানা রুপাকে চাকরিচ্যুত করে একাত্তর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।