স্বনামধন্য লেখক, কলামিস্ট, মত ও পথ সম্পাদক, অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রাণপুরুষ, সাবেক সংসদ সদস্য, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, পঁচাত্তর পরবর্তী প্রতিরোধ যোদ্ধা এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক মাদরাসাছাত্রকে হত্যার অভিযোগে শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাতে মামলা করা হয়েছে। তবে অনেকেই মামলাটিকে হয়রানিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য সূত্রে জানা যায়, নিহত মাদরাসাছাত্র হোছাইন আহম্মদের বড় বোন তানিয়া আক্তার বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় মোকতাদির চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ২৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে আগমনকে কেন্দ্র করে ২০২১ সালে ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় (হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে) মাদরাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভে মাদরাসাছাত্রসহ ১৬ জন নিহত হন। ২৭ মার্চ শহরের টিএ রোডে মাহমুদ শাহ মাজার গেট এলাকায় নিহত হন জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার ছাত্র মাওলানা হোছাইন আহম্মেদ। বাদীর বক্তব্য মতে, তৎকালীন সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরীর নির্দেশে তার সহযোগীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মাদ্রাসা ছাত্রদের ওপর হামলা করলে হুসাইন আহম্মেদের মাথার ডানপাশে গুলি লাগে। আহত অবস্থায় তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কথা হচ্ছে, ২০২১ সালে সংঘটিত একটি হত্যাকাণ্ডে ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট পর্যন্ত থানায় একটি সাধারণ ডায়রিও করা হয়নি কেন? আর এতদিন পর নিশ্চয়ই কোনো হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই এ হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে, স্থানীয় এমপির প্রভাবে তখন থানায় তারা মামলা করতে পারেননি, কিন্তু আদালত তো ছিল। আদালতে তারা কেন এতদিন মামলা দায়ের করেননি?
এবার আমরা ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ, ২০২১-এর ঘটনাবলিতে যেতে চাই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর আগেও বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন কিন্তু এতটা গুরুতর কিছু ঘটেনি। তাহলে ২০২১ সালে কেন ঘটল? বস্তুত মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কোনোটাই হেফাজতপন্থিরা মেনে নেয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখুন এরা মুজিব জন্মশতবর্ষ প্রতিপালন থেকে যোজন যোজন দূরে ছিল। এক মুহূর্তের জন্য তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি শতবর্ষ পালনের। অনুরূপ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও ওরা প্রতিপালনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
মোদির বাংলাদেশে আগমন তাদের হাতে সুযোগ এনে দেয়। ২৬ মার্চ ছিল শুক্রবার। মসজিদগুলোর (বিশেষত বায়তুল মোকাররম মসজিদ) জুমার নামাজের সমাবেশের সুযোগ নিয়ে, বিভিন্ন মিথ্যাচার ও ভণ্ডামির আশ্রয় নিয়ে তারা এক তাণ্ডব চালায়। সেকেন্ডে এ তাণ্ডবের সঙ্গে মিলে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে তার অনুবৃত্তি ঘটায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও এক ব্যাপক তাণ্ডবকর্ম পরিচালনা করে। বস্তুত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ছিল ওদের টার্গেট। বলা যায়, হেফাজত নেতা সাজিদুর রহমান ও মুফতি মুবারকুল্লাহ গং তখন বৈধ সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতা চালিয়েছিল। তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেই সময়ে মাদরাসা ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির সংঘর্ষে বিক্ষোভকারীরা নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছিল।
অন্যদিকে, বিগত এক যুগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোকতাদির চৌধুরী অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় পুতুল নাচ, নৌকা বাইচসহ বিভিন্ন হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী। আর এসবের অগ্রযাত্রা থামাতে উগ্রপন্থীদের ইন্ধনে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলা দায়ের করা হলো কিনা- এমনটিও আমাদেরকে ভাবতে হবে অবশ্যই।
আর এমন বাস্তবতায় সম্প্রতি স্বনামধন্য লেখক, মত ও পথ সম্পাদক র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৩ আগস্ট দায়ের করা মামলাটিকে অবশ্যই হয়রানিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা যায়। আর এমন বাস্তবতায় সাংবাদিক সমাজ অবশ্যই এমন ঘৃণ্য তৎপরতা রুখে দাঁড়াবে বলে মনে করি। একই সঙ্গে যেকোনো হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায়বিচারও প্রার্থনা করছি।