ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে বেসামরিক ব্যক্তিদের দেওয়া সব অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। এসব অস্ত্রের সঙ্গে গোলাবারুদ ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেয়। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার পর অনেকে এসব অস্ত্র জমা দিচ্ছে বলে বিভিন্ন থানা পুলিশের সূত্রে জানতে পেরেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি হতে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট পর্যন্ত যে সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বেসামরিক জনগণকে প্রদান করা হয়েছে তাদের প্রদানকৃত লাইসেন্স স্থগিত করা হলো।’
আরও বলা হয়, এ নির্দেশনার পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তিনি ‘দ্যা আর্মস অ্যাক্ট ১৮৭৮’ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশসহ দেশের বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, সংশ্লিষ্ট থানায় অস্ত্রসহ লাইসেন্সের কাগজ নিয়ে জিডি করে অস্ত্র জমা দিতে হবে। এছাড়া কোনো ব্যক্তি চাইলে তার পরিবারের সদস্য বা প্রতিনিধির মাধ্যমেও অস্ত্র জমা দিতে পারবেন।
আর ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অস্ত্র জমা না দিলে, প্রতিটি জেলা উপজেলায় অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা অনুযায়ী অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো হবে। সেক্ষেত্রে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে।
অস্ত্র যেভাবে জমা দিতে হবে
অস্ত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, অস্ত্রে জমা দেওয়ার সময় দুই কপি ঘোষণাপত্র থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাবর দিতে হবে এবং জিডি করতে হবে। ঘোষণাপত্রে লিখতে হবে—
‘বরাবর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সরকারি প্রজ্ঞাপনবলে আমি (নাম) আমার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র (নম্বর উল্লেখ করে) জমা দিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতের জন্য ডায়রিভুক্ত করলাম (নম্বর)।’
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এ রকম দুই কপি নিয়ে থানায় এলে আমরা অস্ত্র জমা নেব। লাইসেন্সধারী ব্যক্তি সরাসরি থানায় আসতে না চাইলে অথরাইজ পেপার দিয়ে তার মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে আবেদন ও জিডি করে অস্ত্র জমা দিতে পারবেন।’
পিস্তল ও শর্টগান মিলিয়ে ধানমন্ডি থানায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১টি অস্ত্র জমা পড়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
কারা কোথায় অস্ত্র জমা দেবেন
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্ট থানায় অস্ত্র জমা দিতে হবে। যেমন তেজগাঁও থানা এলাকায় যারা বসবাস করেন, তারা তেজগাঁও থানায় অস্ত্র নিয়ে এলে জমা রাখা হবে।
মো. মোবারক হোসেন বলেন, অস্ত্রের সঙ্গে লাইসেন্স ও দরখাস্ত দিতে হবে। দরখাস্তে লাইসেন্সধারীর নাম, অস্ত্রের বর্ণনা, সরকারি নির্দেশনা ও তারিখ লিখতে হবে। পরে জিডি নম্বর দিয়ে এই অস্ত্র জমা নেব।
যার নামে অস্ত্র লাইসেন্স করা, তিনি উপস্থিত না হয়ে কি অস্ত্র জমা দিতে পারবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যক্তি সরাসরি উপস্থিত না হয়ে প্রতিনিধির মাধ্যমে থানায় অস্ত্র পাঠাতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে তার চিঠি লিখে দিতে হবে।
তেজগাঁও থানার ওসি জানান, এই থানায় এখন পর্যন্ত তিনটি অস্ত্র জমা পড়েছে। আজ আরও কয়েকটি অস্ত্র জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, অস্ত্র জমা দেওয়ার সিস্টিম খুবই সহজ। থানায় এসে একটা অস্ত্র জমা দেওয়ার ডকুমেন্ট হিসেবে জিডি করলেই লাইসেন্সধারীরা অস্ত্র জমা দিতে পাবেন। জিডিতে অস্ত্রে নম্বর, কবে লাইসেন্স করা, বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করতে হবে।
এখন পযন্ত ১২ টি অস্ত্র জমা পড়েছে রমনা মডেল থানায়। রমনা মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম ফারুক বলেন, ২০০৯ সাল থেকে যেসব অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সেগুলো আমরা জমা নিচ্ছি, ডিজি করে লাইসেন্সধারীরা থানায় অস্ত্র দিতে পারবেন।
৩ সেপ্টেম্বরের পর অস্ত্র উদ্ধার অভিযান
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াসীম ফিরোজ জানান, তিন তারিখ পযন্ত সময় বেধে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। এই সময়ের ভেতর অস্ত্র জমা না দিলে আমাদের কাছে যে তালিকা আছে, সেটা অনুযায়ী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে।
গত ২৫ আগস্ট রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা ফয়সল হাসান জানান, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, দেশে এখন বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা কমবেশি ৫০ হাজার। এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি অস্ত্র রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে। তাদের বেশির ভাগই আবার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।
পুলিশ বলছে, বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের অনেকেই থানায় যোগাযোগ করে অস্ত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইছেন। তাদের অনেকেই অস্ত্র জমাও দিয়েছেন। ৩ সেপ্টেম্বরের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে তারা হয়তো অস্ত্র দিয়ে দেবেন। এছাড়া বিভিন্ন থানা এলাকাগুলোতে বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের হালনাগাদ হওয়া তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে তাদের অস্ত্র জমা না হলে তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।