লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি কিছুটা নামলেও এখনো ঘরবাড়ি তলিয়ে রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বানভাসি মানুষ। জেলায় এখনো পানিবন্দি ১০ লাখ মানুষ। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবাও পাচ্ছেন না অনেকে। বাড়ছে পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি।
স্থানীয়রা বলছেন, বুধবারের তুলনায় বাসা থেকে ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি পানি কমেছে। কিন্তু সামনের যে সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছি, সেখান থেকে একটুও নামেনি। তাদের দাবি, যেভাবে হু হু করে পানি বেড়েছে, সেভাবে পানি কমছে না৷ তবে সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অনেকের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘরের নানা সরঞ্জাম পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
অনেক এলাকায় টিউবওয়েল ডুবে আছে। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এখনো সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে দুর্গত বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আরও অনেক সময় লাগবে।
এসব স্থানে মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে কষ্ট করছেন। তাছাড়া বন্যার্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মানুষ এক সপ্তাহ ধরে ভাত খেতে পারেননি। তারা দিনের পর দিন শুকনো খাবার খেয়েও ক্লান্ত। অনেকের কাছে চাল-ডাল থাকলেও জ্বালানি সংকটের কারণে রান্না করতে পারছেন না।
এদিকে রামগঞ্জের নরায়পুর, কমলনগর ও রামগতি ও জেলা সদরের পশ্চিম জামিরতলি গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তাদের এলাকার টিউবওয়েলগুলো এখনো পানির নিচে। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকেই বাজার থেকে পানি কিনে খাচ্ছেন। কারণ, ত্রাণের সঙ্গে দেওয়া পানিতে তাদের প্রয়োজন মিটছে না।
কমলনগরের চরকাদিরা ও তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের বেশির ভাগ এখনো পানির নিচে। এতে পানিবন্দি অন্তত ২০ হাজারের বেশি মানুষ। ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করলেও এসব এলাকার বহু বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুবে আছে। তলিয়ে আছে আমন ধানের বীজতলা, শাক-সবজির মাঠ ও রাস্তাঘাট। বন্যার্ত এলাকাগুলোতে প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে রামগতির চরপোড়াগাছা, চরবাদাম, কমলনগরের চরকাদিরা ইউনিয়নের চরবসু, বাদামতলা, বটতলা, পাটোয়ারীপাড়া এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
ভুলুয়া নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পানি সরতে পারছে না। সে কারণে এখনো ওইসব এলাকা পানির নিচে ডুবে আছে। এমন পরিস্থিতিতে এখানকার পানিবন্দি বাসিন্দারা চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলায় উল্লেখযোগ্যভাবে পানি কমেছে। বন্যার পানির সঙ্গে বৃষ্টিপাতের কারণে পানির পরিমাণ বাড়তে থাকে। কয়েক দিনে ভোর রাতে ভারী বৃষ্টিপাতে পানি কিছুটা বাড়লেও গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার থেকে কমছে।
তিনি আরও বলেন, জেলায় এখনো পানিবন্দি রয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবাও পাচ্ছেন না অনেকে। বাড়ছে পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি।
এদিকে সদর উপজেলার কুশাখালীর জাউডগী, নলডগী, বসুদৌহিদা, চরশাহী, আন্ধারমানিক, রায়পুরের চরকাচিয়া ও চরঘাসিয়ার মতো দুর্গম কিছু এলাকায় এখনো ত্রাণ না পৌঁছানোয় সংকটে আছেন এসব জায়গার বাসিন্দারা।