ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, ইউপি চেয়ারম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে একটি চক্র। বিষয়টি জানার পর কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফরিদপুরের ছাত্র সমন্বয়করা।
তারা বলেন, যারা শিক্ষার্থীদের নাম ভাঙিয়ে কোনো প্রকার অনৈতিক কর্মকাণ্ড করবে, তাদের নিকটস্থ থানা ও সেনাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করবেন।
অভিযোগে জানা গেছে, একটি চক্র আওয়ামী লীগ নেতা, সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা, পৌর কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন জনকে ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে ভয়ভীতি এবং মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা চাইছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। গ্রামীণফোনের কয়েকটি নম্বর ও ‘নতুন বাংলাদেশ’, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’সহ বিভিন্ন আইডি থেকে এসব হুমকি দিয়ে টাকা চাওয়া হচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে এমন অভিযোগ নিয়ে কোতয়ালী থানায় কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন। আবার কেউ স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ নামের একটি আইডি থেকে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে দেখা করার কথা বলা হয়। এক সময় বেশকিছু টাকা দাবি করা হয়। টাকা দেওয়া না হলে হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কিছু ছবি পাঠিয়ে বলা হয়, আপনি আওয়ামী লীগ করেন, আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করলে আপনার নামে ছাত্র নির্যাতনের মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। এ নিয়ে উক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মকর্তাকে ফোনে আকাশ নামের এক ব্যক্তি ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন, আপনি অনেক অবৈধ টাকা কামিয়েছেন। আমাকে টাকা না দিলে ফেঁসে যাবেন।
অব্যাহতভাবে এমন হুমকির বিষয়ে উক্ত কর্মকর্তা কোতয়ালী থানায় অভিযোগ করতে বাধ্য হন।
জেলা ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তাকে ভয় দেখিয়ে টাকা চাওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। জানা গেছে, ওই কর্মকর্তা নিজের চাকরির কথা চিন্তা করে কিছু টাকা দিয়ে রেহাই পান চক্রটির হাত থেকে।
ছাত্রদের নাম ভাঙিয়ে এ চক্রটি সরাসরি দেখা না করে বিকাশ ও অন্যান্য মাধ্যমে টাকা নিচ্ছে। যারা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ফেক আইডি থেকে মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুরের অন্যতম সমন্বয়ক আবরার নাদিম ইতু বলেন, আমরা এমন ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি। আমাদের নাম ভাঙিয়ে অনেকের কাছে টাকা চাওয়া হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কেউই এমন কাজ করতে পারে না। আমাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং একটি চক্র বিভিন্ন জনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যারা টাকা চাইবে তাদের বিষয়ে আমাদের কাছে কিংবা স্থানীয় প্রশাসনকে জানান। আমরা এ চক্রটিকে ধরতে কাজ শুরু করেছি।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি জানা নেই। তারপরও খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে থানায় জমাকৃত অভিযোগগুলো তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।