ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহসিন আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলার আসামি তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পত্তন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য হৃদয় আহমেদ ওরফে জালালের কাছে তিনি এই চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে দুই নেতার কথোপকথনের ২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ডিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৬৮ নেতা-কর্মীকে আসামি করে বিজয়নগর থানায় একটি মামলা করা হয়। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন মাহবুবের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ওই মামলা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে আজ দুপুরে মহসিন আহমদের বিরুদ্ধে উপজেলার চম্পকনগর বাজারে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে তাঁর গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। উপজেলার সব ছাত্র-জনতার ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কথোপকথনটিতে শোনা যায়—
হৃদয়: জি ভাই।
মহসিন: জাকারিয়াসহ (আইনজীবী) কয়েকজন ম্যানেজ করতাছে। আপনার সাথে মনে হয় জাকারিয়া ফোন ধরতাছে না, কারণ ফোন বন্ধ, চার্জ নাই।
হৃদয়: আমিও বন্ধ পাইতাছি।
মহসিন: হ্যাঁ, বন্ধ পাইতাছেন। তাহলে কিছু খরচাদি দিওনই লাগব। ইতা তো লজ্জায় বুঝতে পারতাছি না, কী কমু কন।
হৃদয়: আচ্ছা।
মহসিন: কারণ না বাঁচাইতারলে তো টেহাও যাইব মানে জেলও খাটবেন। বাঁচাইতারলে তো এক পয়সা খরচ গেলেও বাঁইচা গেলেন গা।
হৃদয়: হ্যাঁ।
মহসিন: কেমনে কী করুম, বলেন?
হৃদয়: কত দিওন লাগব?
মহসিন: দেন না, হেরা পাঁচজন ইয়ে করতাছে। একটা টিম আছে তো পাঁচজনের। জাকারিয়ার সাথেই বইলাই ইয়া করেন না।
হৃদয়: হ্যাঁ।
অডিওর শেষের দিকে আরও বলতে শোনা যায়—
মহসিন: অহন তো আর দিতারদেন না। রাত হইয়্যা গেছে গা না। আপনার কি বিকাশ আছে?
হৃদয়: না না।
মহসিন: হ্যালো।
হৃদয়: না, বিকাশ তো নাই। বিকাশ তোর বাসার কেউর নাই।
মহসিন: বুঝছি। অহন তো বাড়িতে। সকালবেলা ওই জাকারিয়ার সাথে কথাবার্তা কইয়্যা একটু ইয়া কইরা দিয়েন। দেখি আমি মানে নামডা কাইটা দিমু আরকি। এইডা হইলো কথা।
হৃদয়: আচ্ছা, আচ্ছা ভাই।
মহসিন: ভাই হিসাবে যত দূরা সেইভ করণের আমি মানে করব আরকি বুঝছেন না।
হৃদয়: আচ্ছা আচ্ছা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহসিন আহমেদ ভূঁইয়া একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘আমি জালালের (হৃদয়) সঙ্গে কথা বলছি। কিছু কথা তারা রাখছে, কিছু এডিট করেছে।’ খরচাদি চাওয়ার বিষয়ে প্রসঙ্গে মহসিন আহমেদ বলেন, ‘না না, এটি সঠিক না। এটাকে এডিটিং করেছে আমাকে ঘায়েল করার জন্য। কারণ, তারা আমার সঙ্গে আর পারতেছে না। এখানে টাকার কথা যদি উল্লেখ থাকত যে ৫ হাজার, ৫০ হাজার ও ৫ লাখ টাকা দিবা তাইলে মনরে বুঝ দিতা পারবা।’
এ বিষয়ে হৃদয় আহমেদ বলেন, ‘যখন মামলার কথা হয় তখন মহসিন ভাই আমাকে এটাই বলছে যে “তোমার ব্যাপারে একজন একটা অনুরোধ করেছে নাম বাদ দেওয়ার জন্য। এখন মামলার যে কপিটা আছে সেটা পরিবর্তন করতে হবে। কিছু খরচপাতি লাগবে।’” হৃদয় বলেন, ‘মামলায় আমার নাম নেই। আমি কোনো টাকাপয়সা দিইনি।’