জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. রবিউল হোসেন ভূঁইয়া।
তিনি জানান, আজ বিকেলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ পাঁচ থানায় মামলা রয়েছে। তাকে ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী। এর আগে তিনি আরও দুবার দুটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (যোগাযোগমন্ত্রী এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের খনিজ সম্পদ বিভাগের মন্ত্রী) ছিলেন। মঞ্জু পিরোজপুর-২ আসন থেকে ছয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাতীয় পার্টির একটি অংশের নেতা। যা জেপি নামে পরিচিত। তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া একজন নামকরা রাজনীতিবিদ এবং দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক ছিলেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা। আত্মগোপনের তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। ইতোমধ্যে তাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের কোনো মন্ত্রীকে গ্রেফতারের খবর প্রথম আসে ১৩ আগস্ট। সেদিন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
১৪ আগস্ট সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু; সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
১৬ আগস্ট রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়ি থেকে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
১৬ আগস্ট রাতে সেনাবাহিনী থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকেও গ্রেফতার করা হয়। জিয়াউল আহসান সর্বশেষ টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। তাকে নিউমার্কেট থানার হকার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
১৯ আগস্ট সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মুদিদোকানি আবু সায়েদকে গুলি করে হত্যার মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
২০ আগস্ট রাতে কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য কথিত ইয়াবা গডফাদার আবদুর রহমান বদিকে গ্রেফতার করে র্যাব। কক্সবাজারের টেকনাফে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
২১ আগস্ট ভোরে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে একাত্তর টিভির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রধান প্রতিবেদক-উপস্থাপক ফারজানা রুপাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
২২ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকেও নিউমার্কেট হওয়া একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
২৩ আগস্ট জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ ও আটবারের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
২৩ আগস্ট রাতে অবৈধভাবে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
২৫ আগস্ট ভোরে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপকে আদাবর থানায় দায়ের করা পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
২৬ আগস্ট বিকেলে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে গ্রেফতার করা হয়। রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
২৮ আগস্ট রাতে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রাজধানীর গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। স্বর্ণশ্রমিক মুসলিম উদ্দিন মিলন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করে র্যাব।
১ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. সলিমুল্লাহ সলুকে গ্রেফতার করে র্যাব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সুজন নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সবশেষ ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা-৭ আসনের প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজধানীর বংশাল এলাকা থেকে বংশাল থানায় হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।