লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাটে সোহাগ পরিবহনের বাস কাউন্টার দখল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। একে অপরকে চাঁদাবাজ ও দখলবাজ বলে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিলসহ সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় মহিলা দল নেত্রী নয়ন বেগম ও যুবদল নেতা মুহাম্মদ ইউনুসের অনুসারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চররমনি মোহন ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনুসের দুই অনুসারী মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাটের সোহাগ পরিবহনের বাসকাউন্টার পরিচালনা করে আসছিল। সম্প্রতি জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন বেগম কৌশলে বাস মালিকের কাছ থেকে কাউন্টারটি পরিচালনার দায়িত্ব নেন। তবে তিনি চুক্তিপত্র করেন তার এক আত্মীয়ের নামে। এ ঘটনায় ইউনুস ও নয়নের অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার ইউনুসের অনুসারীরা কাউন্টারে হামলা-ভাঙচুর ও উপস্থিত লোকদের মারধর করে। এর পর নয়নের অনুসারীরা ঘটনাস্থল জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে ঘটনাটি নিয়ে একইদিন বিএনপির সিনিয়র নেতারা সমঝোতা বৈঠক করেন। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ঘটনার সুষ্ঠু কোনো সমাধান হয়নি। উল্টো পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) যুবদল নেতা ইউনুসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নৌ-ঘাট ও বাজার দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ এনে নয়নের অনুসারীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। এতে ইউনুসকে বহিষ্কারসহ শাস্তির দাবি জানায় বিক্ষুব্ধরা।
অন্যদিকে ভুয়া অভিযোগ তুলে সম্মান ক্ষুণ্ণ করার ঘটনায় শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মজুচৌধুরীরহাট এলাকায় ইউনুস সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তার বিপুল সংখ্যক অনুসারী উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মজুচৌধুরীর হাটের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানায়, এতো দিন বাসকাউন্টার আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে ছিল। সরকার পতনের পর কাউন্টার দখল নিয়ে বিএনপির নয়ন ও ইউনুস গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। তারা পৃথক মহড়া দিচ্ছে বাজারে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নয়ন বেগম বলেন, ইউনুস বাস কাউন্টার দখলে ব্যর্থ হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলেছে। সরকার পতনের পর থেকে তিনি বাজার ও নৌ-ঘাট দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছেন। তার কারণে দলের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
চররমনী মোহন ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, বাস কাউন্টার পরিচালনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবুও আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়েছে। নয়ন শুধু সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার নয় অন্য একটি বাস কাউন্টার দখলের চেষ্টা করছে।
সোহাগ বাস কাউন্টারের দোকান মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, যুবদল নেতা ইউনুস আমার হয়ে নয়নের কাছ থেকে জামানতের টাকা আনতে যায়। পরে ইউনুস টাকাটি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে।
জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সৈয়দ রশিদুল হাসান লিংকন বলেন, ঘটনাটি নিয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। আমাদের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ এ নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। এটি দলীয়ভাবে মীমাংসা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা মহিলা দলের সভাপতি সাবেরা আনোয়ার বলেন, নয়ন প্রতিবাদী নেতা। সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। একটি পক্ষ বাস কাউন্টার ও মাছঘাট দখল করতে গেলে নয়ন প্রতিবাদ করে। এতে ওই পক্ষ নয়নের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, একটি পক্ষ মামলা করেছে। দুইজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এখন ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।