চলতি মাসের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। তবে নয়াদিল্লি এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, এমন ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তিরা হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহের শুরুতে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেসব মন্তব্য করেছেন, তাতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর এই বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন, ওই সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেসব মন্তব্য করেছেন, সেগুলোকে ভালোভাবে নেয়নি নয়াদিল্লি।
ঢাকার পক্ষ থেকে চলতি সপ্তাহের শুরুতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানানো হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে এ মাসের শেষের দিকে তাঁদের নিউইয়র্কে অবস্থানের কথা রয়েছে। সূত্রের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস জানাচ্ছে, ঢাকার পক্ষ থেকে করা ওই অনুরোধের বিষয়ে নয়াদিল্লি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। নিউইয়র্কে মোদির সম্ভাব্য দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আলোচনার বিষয়ও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতে থাকা অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ নিয়ে করা মন্তব্যের সমালোচনা করেন। সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ইঙ্গিত দেন, বাংলাদেশ তাঁর (শেখ হাসিনা) প্রত্যর্পণ চাইতে পারে এবং বলেন, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সব দল ‘ইসলামপন্থী’—এই বয়ান থেকে ভারতের সরে আসা উচিত।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত ভারত যদি তাঁকে (শেখ হাসিনা) রাখতে চায়, তাহলে শর্ত হতে পারে যে তাঁকে চুপ থাকতে হবে।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ভারতে বসে তিনি কথাবার্তা বলছেন ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কেউ এটা পছন্দ করছেন না। এটা আমাদের বা ভারতের জন্য ভালো নয়।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য নিয়ে নয়াদিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সূত্রগুলো জানিয়েছে, তাঁর (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) এ ধরনের মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে ভালো সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল না।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সেদিনই সামরিক বিমানে দেশ ছেড়ে ভারতে যান তিনি। শেখ হাসিনা তখন থেকে ভারতে আছেন। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে তাঁর কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে। এ অবস্থায় তিনি আর ভারতে থাকতে পারবেন কি না এবং তাঁর সম্ভাব্য প্রত্যর্পণ বিষয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। তাঁকে ফিরিয়ে আনার দাবিও জোরালো হচ্ছে।
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্বল্প সময়ের নোটিশে শেখ হাসিনাকে ভারতে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ যদি শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ করে, তাহলে নয়াদিল্লি কী করবে, এমন প্রশ্নে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সম্প্রতি জানিয়েছেন, এটা অনুমাননির্ভর প্রশ্ন। এ ধরনের অনুমাননির্ভর প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান তাঁরা।