সোম ও মঙ্গলবার দুই দফায় ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা জেলা প্রশাসক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল চান।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ৩৪ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে সোমবার ২৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ৩৪ জেলায় ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির পর বঞ্চিত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ভিড় করতে থাকেন। ভিড় করা এই কর্মকর্তারা মূলত বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত যারা আওয়ামী লীগের আমলে পদায়ন-পদোন্নতির ক্ষেত্রে বঞ্চিত ছিলেন।
বঞ্চিত কর্মকর্তারা দাবি করেন, যাদের ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। গত সরকারের অনুগত থাকায় তারা ভালো জায়গায় চাকরি করেছেন।
ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও কে এম আলী আযমের কক্ষে যান। এ দুই যুগ্মসচিব বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত, সম্প্রতি তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পদায়ন করা হয়েছে।
বঞ্চিত কর্মকর্তারা তাদের কাছে জানতে চান, তারা থাকতে কীভাবে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীরা ডিসি নিয়োগ পেল? জবাবে তারা জানান, মূলত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ তালিকা চূড়ান্ত করেছে। তখন উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই দুই যুগ্ম সচিবের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
পরে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ওই দুই যুগ্ম সচিবসহ ২৫-৩০ জন কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কক্ষে প্রবেশ করেন। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তারা বের হয়ে আসেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কক্ষ থেকে বের হওয়া কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানিয়েছি। কেন বাতিল করতে হবে সেটাও তুলে ধরেছি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, তিনি আমাদের দাবি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের কাছে তুলে ধরবেন। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
ডিসি নিয়োগ পাওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে বঞ্চিতরা বলেন, তাদের কয়েকজনের শেয়ারবাজারে মোটা অংকের বিনিয়োগ, সহকর্মীকে হেনস্তা, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, সাবেক মন্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল। তারা দীর্ঘদিন জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। আবার এখন নতুন করে পেলেন হিসেবে ডিসি নিয়োগ।
যারা ডিসি নিয়োগ পেয়েছেন তাদের অনেকের নাম দিয়েছেন তানভীর নামে একজন সমন্বয়ক। তাকে ইদানিং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন একজন কর্মকর্তা।
ডিসি ফিটলিস্ট করার সময় বলা হয় মাঠ প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি), ইউএনও, এসিল্যান্ড পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু ডিসি নিয়োগ পেয়েছেন এমন অনেকের মাঠ প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই বলে দাবি করেন প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ ব্যাচের একজন উপসচিব।
আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগের সময় আমরা বঞ্চিত হয়েছি। আমরা নির্বাচনকে প্রভাবিত করবো বলে আমাদের মাঠ প্রশাসনে পদায়ন করা হয়নি। ডিসি হতে পারিনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও আমরা পেলাম আরও বড় বঞ্চনা।
সরকারের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। জেলা পর্যায়ে ডিসি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন।
ডিসি জেলার সাধারণ প্রশাসনিক কার্যক্রম, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং কালেক্টর হিসেবে ভূমি ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো দেখে থাকেন। এছাড়া নির্বাচিত সরকারের বিশেষ কর্মসূচি এবং চলমান সব উন্নয়নমূলক কাজে জেলা প্রশাসক তদারক করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সেদিনই বিলুপ্ত হয় মন্ত্রিসভা। পরদিন ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি।
এরপর গত ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া রয়েছেন ২০ জন উপদেষ্টা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে রদবদল আনছে।