যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প টেলিভিশন বিতর্কে মুখোমুখি হচ্ছেন আজ মঙ্গলবার। এটি তাদের প্রথম মুখোমুখি টেলিভিশন বিতর্ক। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রাত ৯টায় এ বিতর্ক সরাসরি দেখতে এবিসি টেলিভিশনে চোখ রাখবেন দর্শক। এর আগে সিএনএনে জো বাইডেনের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই বিতর্কে খারাপ প্রদর্শনীর জন্য পরে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল বাইডেনকে। তবে কমলার সঙ্গে লড়াইটা ট্রাম্পের জন্য সহজ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতর্কের স্পন্সর ও উপস্থাপনাসহ সার্বিক দায়িত্বে রয়েছে এবিসি নেটওয়ার্ক। সাংবাদিক ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস সঞ্চালনা করবেন। কীভাবে, কোন দিক থেকে তাদের দু’জনের বিতর্ক দেখানো হবে, তার সিদ্ধান্তও টেলিভিশন নেটওয়ার্কের।
এ প্রেক্ষাপটে উভয় প্রার্থীর পক্ষ থেকেই অভিযোগ মাথায় নিয়ে চাপের মুখেই চ্যানেলটি বিতর্ক সম্প্রচার করতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে কমলার এক প্রচারণা সহযোগী মন্তব্য করেছেন, বিতর্কে এবিসি এমন কিছু নিয়ম-নীতি আরোপ করেছে, যা কমলার জন্য অসুবিধার। অপরদিকে ট্রাম্প অনেকটা খোলাখুলিভাবে সংবাদ নেটওয়ার্কের সমালোচনা করেছেন। তিনি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে এবিসিকে ‘অত্যন্ত খারাপ’ ও ‘চরম বাজে’ বলেও মন্তব্য করেন। একবার তিনি বিতর্কে অংশ নেওয়া নিয়েও দ্বিধা প্রকাশ করেছিলেন।
গত শনিবার উভয় নেতা ফিলাডেলফিয়ায় এবিসি নিউজের কার্যালয়ে অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করেন এবং বিতর্কে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দেন। এক সাক্ষাৎকারে নেটওয়ার্কের রাজনৈতিক বিভাগের পরিচালক রিক ক্লেইন বলেন, বিতর্কের ক্ষেত্রে আমাদের নীতি বা নিয়মের কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমাদের কাজ হলো ওই সময়টাকে ধরে রাখা; সময়টা হবে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ।
এ বিতর্ককে সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ এক জরিপে দেখা গেছে, কমলা ও ট্রাম্প অনেকটা সমানে সমান টক্করে আছেন। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়ানা কলেজের চালানো ওই বিতর্কে দেখা গেছে, কমলার চেয়ে এক শতাংশ এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। তাঁর সমর্থন যেখানে ৪৮ শতাংশ, কমলার সেখানে ৪৭ শতাংশ। জরিপে অংশ নেওয়া একটি বড় অংশের ভোটার বলছেন, তারা কমলা সম্পর্কে আরও বিশদভাবে জানাতে চান। জো বাইডেন ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর কমলা প্রার্থী হলে বড় ধাক্কা খান ট্রাম্প। দ্রুতই তাঁর সমর্থনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমলার সমর্থন বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় আজ যে বিতর্ক হতে যাচ্ছে, তার ফল গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করত পারে।
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে টেলিভিশন বিতর্ককে ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে জোরালো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দুই প্রার্থী। এ ক্ষেত্রে কিছুটা বিপাকে আছেন ট্রাম্প। দ্য হিল অনলাইন জানায়, ডোমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর সমর্থন পেতে যাচ্ছেন। এ সমর্থকরা রিপাবলিকান হলেও ট্রাম্পবিরোধী হিসেবে পরিচিত। গত বুধবার রিপাবলিকান নেতা লিজ চেনি কমলাকে সমর্থন জানান। পরে শুক্রবার তাঁর বাবা জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান ও সাবেক জর্জ ডব্লিউ বুশ সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি জানান, তিনি কমলাকে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
এ দু’জন ছাড়াও কমলার নির্বাচনী প্রচার দল রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় কমিটির দুই শতাধিক সদস্যের সমর্থন পেয়েছেন। এ ছাড়া ট্রাম্পবিরোধী সাবেক রিপাবলিকান অ্যাডাম কিনজিঞ্জারও কমলাকে সমর্থন করেছেন। ডেমোক্র্যাট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে ভাষণও দেন কিনজিঞ্জার।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্পের লোকসান ৪০০ কোটি ডলার
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি ট্রুথ সোশ্যাল গভীর মন্দার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। ক্রমেই এর অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এতে ট্রাম্পকে এ পর্যন্ত ৪০০ কোটি ডলার লোকসান গুনতে হয়েছে। সিএনএন জানায়, ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপের শেয়ার গত সপ্তাহে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে যায়। গত ২৭ মার্চ ট্রাম্পের সামাজিক মাধ্যমটি সর্বোচ্চ ৬৬ দশমিক ২২ ডলারে উন্নীত হওয়ার পর থেকে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ (৭৪ শতাংশ) মূল্য হারিয়েছে।
গত ৯ মে ট্রাম্পের ১১৪ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন শেয়ারের মূল্য ছিল ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা তাঁকে প্রভাবশালী অবস্থানে রেখেছিল। এটি এখন প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এর জেরে ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার সূচকে বিশ্বের ৫০০ ধনাঢ্য ব্যক্তির তালিকা থেকে ছিটকে গেছেন ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালের শেয়ারের পতন সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলার সমানে সমান টক্কর অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।