গত ৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাতে রাজশাহীর বিনোদপুর বাজারে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ নামের এক যুবককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জানা গেছে, এক দশক পূর্বে ২০১৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় ছাত্রশিবিরের হামলায় ঐ যুবকের পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকে একটি কৃত্রিম পায়ের সাহায্য নিয়ে পঙ্গু জীবনযাপন করছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ২২ ডিসেম্বর থেকে তিনি এ পদেই চাকরি করতেন।
মাত্র পাঁচ দিন পূর্বে প্রথম কন্যা সন্তানের বাবা হন মাসুদ। শনিবার সেই কন্যার জন্য ওষুধ কিনতে বাসা থেকে বের হয়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতার হামলার শিকার হন। প্রথমে তাকে বস্তায় ভরে পেটানো হয়। এরপর রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে তাকে ফেলে রাখা হয়। চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে নিতে যেতে দেওয়া হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়- মাটিতে ফেলে রাখা অবস্থায় বারবার পানি খেতে চাইলেও খুনিরা তাকে ন্যুনতম সহানুভূতি দেখায়নি! তারা মাটিতে ফেলে রেখেই তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন! কী করুণ দৃশ্য! ছোট শিশুটির নিষ্পাপ চেহারার দিকে কি আমরা তাকাতে পারব? তাকে পিতৃহারা করার অধিকার হত্যাকারীদের কে দিল? যদি শিশুটির বাবা অপরাধ করেও থাকে কে মবকে লাইসেন্স দিল বিচার করার?’
যেখানে গুরুতর অপরাধের জন্যও সাধারণত কোনো আদালতে পঙ্গু ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় না, সেখানে একজন নিরপরাধ যুবককে শুধু একটি দলের সমর্থক হওয়ার কারণে এভাবে পিটিয়ে হত্যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। মাসুদ হত্যার হৃদয়বিদারক দৃশ্য প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। শুধু মাসুদ নয়, এধরনের মব জাস্টিসের শিকার হচ্ছেন দেশের হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ। নৃশংস, বর্বরতার প্রদর্শনী দেখে দেশবাসী ক্লান্ত, বিমর্ষ ও হতভম্ব। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের চলমান নৃশংসতা বন্ধে দেশি, বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সরব ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।
আমরা মনে করি, ‘মব জাস্টিস’-এর নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের অভিপ্রায়ে যাবতীয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিসর্জন দেওয়ার যে চর্চা দেশজুড়ে চলছে, তা বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকেই ধাবিত করছে। নির্বিচারে গণহত্যা জাতির জন্য গভীর বিপর্যয় ডেকে আনবে, এটি রাষ্ট্রের জন্য শুভকর নয়। সুতরাং দেশের স্থিতিশীলতার জন্য চলমান হত্যার উৎসব বন্ধ করা এবং শৃঙ্খলা আনা অত্যাবশ্যক। একইসঙ্গে মাসুদ হত্যাসহ সকল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় রাষ্ট্র সংস্কারের যে বুলি আওড়ানো হচ্ছে তা জাতির কাছে প্রহসন হিসেবে চিহ্নিত হবে।