বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থানের পর কয়েকজনের পোস্ট খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করছিলাম, যাদের আমরা আসলে বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। তাদের সবার প্রতি আমার বহু বছরের শ্রদ্ধা, ভক্তি, এবং ভালোবাসা আগে থেকে ছিল। কিন্তু এই আন্দোলনটি আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো যে, মানুষ সততই ক্ষমতাপ্রিয় এবং নিজেরা ক্ষমতায় থাকতে না পারলে নিদেনপক্ষে নিজ আদর্শের মানুষেরা ক্ষমতায় থাকলেও এদের ক্ষমতার ন্যারেটিভ পাল্টে যায়। আমি অনেকগুলো উদাহরণ দিতে পারতাম; আপাতত দুটো বিষয়ে কথা বলবো। ভেবেছিলাম, সংশ্লিষ্টরাই নিজেদের সঠিক অবস্থানটি তুলে ধরবেন। কিন্তু ওই যে, আমরা সততই ক্ষমতাপ্রিয়, এবং সে কারণেই আমাদের আদর্শের মানুষেরা ক্ষমতায় থাকলে তাদের সব পাপ মাফ হয়ে যায়। এটি ঘটে চলেছে নিরন্তর; তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য এটি আরও সত্যি।
আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ক্রমাগত শেখ হাসিনা সরকার কত খারাপ ছিল তার বিস্তারিত তথ্য বেরুচ্ছে। আমার জন্য এটি কোনও সমস্যা নয়। তার খারাপ কাজকে ডিফেন্ডও করিনি কখনও। কিন্তু আমার একটি বড় সমস্যা হলো, আমি যে কোনও দাবির স্বপক্ষে সব সময়ই প্রমাণ দাবি করি। এই স্বভাবটি তৈরি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে আমার শিক্ষক এবং গুরু ড. মাহবুব আহমেদের প্রভাবে। স্যার সব সময় আমাদের বলতেন, ‘ডু নট লেট এনিথিং গো আনচ্যালেঞ্জড’। ওই যে জিনিসটি তিনি শিখিয়েছিলেন সে কারণেই কেউ কিছু বললেই জানতে চাই তাঁর কাছে ঘটনাটির কোনও প্রমাণ আছে কিনা।
তো প্রথম ঘটনাটির একটু শানে নজুল দেই। আন্দোলন চলাকালে এবং পরবর্তীতে আমি শেখ হাসিনা সরকারকে ডিফেন্ড করিনি গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে তার চরম অসফলতার জন্য। এর ওপর আন্দোলনের সময় প্রায় ৮০০ সন্তান খুন হবার ঘটনাটি ঘটেছিলো তারই সরকারের অধীনে; কাজেই তাকে সমর্থনের প্রশ্নই নেই, বরং অবশ্যই এর বিচার হতে হবে।
আমার আলোচ্য বিষয় হলো, শেখ হাসিনার দুর্নীতি, এবং এটির বিষয়ে আমার শ্রদ্ধেয় বুদ্ধিজীবীদের প্রতিক্রিয়া।
সাধারণত আমাদের মতো দেশগুলোতে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটলেই সব কিছু বাদ দিয়ে তিনি কতটা দুর্নীতিবাজ ছিলেন বা সোজা কথায় তিনি কতটা চোর ছিলেন তার আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। এবার এটি ঘটেনি; শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে দেখা গেলো তিনি কতটা স্বৈরাচারী ছিলেন, তা নিয়েই সব কথাবার্তা।
অর্থাৎ তিনি কতটা নিষ্ঠুর ছিলেন তা নিয়ে সব আলোচনা; আয়নাঘর সহ সব নির্যাতনের প্রমাণ হাজির করা হচ্ছে একের পর এক। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। কিন্তু আমি ভাবছিলাম, শেখ হাসিনার দুর্নীতি সম্পর্কে এতজন বিদগ্ধ মানুষের কোনও কথাবার্তা নেই; ঘটনা কী?
অতঃপর হঠাৎ করে খবর বেরুলো, শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার ঘুষ নিয়েছিলেন রাশিয়ানদের কাছ থেকে। শুনেই কেমন খটকা লাগলো। ৫০০ কোটি? বলেন কী? তো প্রকল্পটা কত বড়? এরপর এই তথ্যের উৎস খুঁজলাম। এটা আমার স্বভাব আমার গুরুর কারণে। দেখলাম, যে পত্রিকায় এ খবরটি বেরিয়েছে তাদের মূল কাজ এ জাতীয় খবর প্রচার নয়। এটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডিফেন্স বিষয়ক পত্রিকা; অন্য দেশের দুর্নীতির খবরাখবর নিয়ে এদের কাজ নয়। তাহলে এলো কেন হঠাৎ? আর অত বড় খবর জোগাড় করতেও তো সময় লাগে। এর মানে এরা অনেকদিন ধরেই খবরটি সংগ্রহ করছিলেন। তো তারা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় খবরটি দিলেন না কেন? আমাদের দেশে না হয় গুম হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল, কিন্তু স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেখান থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় সেখানে এ খবরটি প্রকাশে সমস্যা কী ছিল? এর ওপর ওয়াশিংটন পোস্ট বা নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রিকাগুলোতো এমন খবর পেলে লুফে নিতো। মনে হলো, ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’।
এরপর এদের প্রবন্ধটি দেখলাম নিজের ক্ষমতায় যেটুকু কুলিয়েছে। মজা আসলে সেখানে। এরা বলছে, শেখ হাসিনা এবং তার পরিবার রাশিয়ানদের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলার মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের ব্যাংকের মাধ্যমে সরিয়েছে। আরও ভালো। তো এই ব্যাংকগুলোর নাম কই? কারা টাকাটা জমা করেছে? অ্যাকাউন্ট নম্বর কই? শেখ হাসিনা বা শেখ রেহানা বা সজীব ওয়াজেদ জয় নিজেদের নামে জমা করেছেন? কী শিশুসুলভ চিন্তা! ভেবে দেখুন এই পত্রিকার এত বড় রিপোর্টিং নিয়ে আপনি যদি নিরপেক্ষ হন তবে এটিকে কী বলবেন।
আমি আরও অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, এ বিষয়ে শেখ হাসিনার যে মূল প্রতিপক্ষ বর্তমান সরকার তারা কিছু বলছেন না। ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছু বলেছেন কি? মনে করতে পারছি না।
কিন্তু অনেকে লম্বা লম্বা প্রবন্ধ লিখে বিশাল যুগান্তকারী সব রায় দিতে থাকলেন। তারা ঝাঁপিয়ে পড়লেন এই বলে যে, ৫০০ কোটি ডলার দিয়ে বাংলাদেশে ক’টা ব্রিজ হতে পারতো, ক’টা আরো কী কী হতে পারতো, ইত্যাদি। সমস্যাটা সেখানেও নয়। শেখ হাসিনার কাছ থেকে এই পরিমাণ টাকা উদ্ধার করা গেলে নিশ্চয়ই আলাদা এমন একটি পরিকল্পনা কমিশন গঠন করা যেতে পারতো যেটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সদস্য রাখা যেতো যারা তর্ক-বিতর্ক করছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, সব কিছুই আছে, শেখ হাসিনার ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ টাকাটাই নেই।
কাজীর গরু ওই পত্রিকার খবরে আছে, আমার শ্রদ্ধেয় অগ্রজ এবং অনুজতুল্য বুদ্ধিজীবীদের লেখায় আছে, কিন্তু গোয়ালে নেই। গোয়ালে এটি নেওয়ার আগেই চরম উৎসাহে এই গরু দিয়ে কী কী উৎসব করা যেতে পারতো তার বিস্তারিত বিবরণ বেরিয়ে গেলো সকল সামাজিক মাধ্যমে।
আমার মতো সাধারণ জনতা বুদ্ধিজীবীদের এইসব লেখা পড়ে “মারহাবা মারহাবা” আওয়াজ দিতে থাকলাম জোরে জোরে। এমন বুদ্ধিজীবীরাইতো আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। সত্য বটে ড. ইউনূস, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বা নিদেনপক্ষে শান্তশিষ্ট মানুষ আমার শিক্ষক ড. ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদের মতো বুদ্ধিজীবীরা এ নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না।
তো যা বলেছিলাম। কিতাবের গরু গেলো কোথায়? কয়েকদিন পরই ‘গরু’র খোঁজ পাওয়া গেলো। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত গেলেন জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করতে। ভদ্রলোক কথা বলেন জোরে; তবে তার কথ্য ইংরেজি আমার চেয়ে ভালো। তো তিনি উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এলেন এবং গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে ছেঁকে ধরলো। এক পর্যায়ে, তার কাছে জানতে চাওয়া হলো, কী হে বাপু, তোমরা কোন বিবেচনায় শেখ হাসিনাকে একেবারে ৫০০ কোটি ডলার ঘুষ দিয়ে দিলে?
আর যায় কই? ভদ্রলোকের বয়স থেকে আন্দাজ করি, তিনি যথেষ্ট শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করে বাংলাদেশে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন, এবং পিটার হাস এক পর্যায়ে তার হম্বিতম্বিতে খুব সুবিধা করতে পারেননি। তো যাইহোক, এই ভদ্রলোক হাসিমুখে সাংবাদিকদের বললেন, ‘আমরা কি এতই পাগল হয়ে গেছি যে একজনকে ৫০০ কোটি ডলার দেবো! ইটস রিউমারস অ্যান্ড কমপ্লিটলি ফলস। ’
তিনি আরো বললেন, আরেকটি শক্ত এবং শক্তিশালী বন্ধুরাষ্ট্র নাকি জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকেই এই ব্লু প্রিন্টটি নিয়ে এগিয়েছিলো, এবং তারা এটি কার্যকর করে এই পর্যায়ে এসে। এমন ইঙ্গিত রাশিয়া ডিসেম্বরেও দিয়েছিলো বটে, কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার গা করেনি।
তো এখন আমার আশা এবং নিরাশার কথা বলি। আমি খেয়াল করে দেখলাম, এই যমানায়ও এক সেট সুশীল বুদ্ধিজীবীর আবির্ভাব ঘটেছে যাদের কাজ হচ্ছে বর্তমান শাসক এবং তাদের শাসনকে জায়েজ করা। এমনকি আগের আমলে সেমিনারে ক’জন মানুষ যেতো, আর এখন ক’জন যায় এটিও তারা তুলনা করা শুরু করেছেন। ভাবখানা এমন যেন এই আমলে এসে জনগণের জ্ঞানতৃষ্ণা বেড়ে গেছে এক মাস না যেতেই।
আমার মতো নাদান জনতা তাদের দেশপ্রেম দেখে মুগ্ধ হলাম; সমস্যা হলো, আমার প্রত্যাশা ছিল এদের কাছে যে, তারা প্রামানিক দলিল দস্তাবেজ দিয়ে কথা বলবেন। বলাই বাহুল্য তারা সেটি করেননি। শুধু শুনেই প্রবন্ধ লিখে ফেলেছেন, টকশোতে কথা বলছেন। এমনকি আমি নিশ্চিত তারা গ্লোবাল ডিফেন্স কোরে প্রকাশিত প্রবন্ধটি ভালো করে পডেননি; পড়লে বেশ কিছু প্রশ্ন তাদের মনে জাগতো, এবং তারা বুঝতেন যে, এটি একটি প্রপাগান্ডা মাত্র।
যাইহোক, তারপরও ধরে নিলাম যে, তারা ভুল করেই প্রতিক্রিয়া দিয়ে বসেছিলেন; কিন্তু যখন তারা দেখলেন যে, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত এই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে কিছুটা ইনডিরেক্টলি যারা এই দাবিটি তুলেছিলেন তাদের ‘পাগল’ বললেন, তখন আমার আশা ছিল এই যে, অনেকেই এ বিষয়ে তাদের পূর্ব প্রতিক্রিয়াটির জন্য ক্ষমা চাইবেন এবং এটি তুলে নেবেন। ব্যাপারটি এর ধারে কাছে গেলো না, অথচ এটিই পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের নীতি। এরা কথার কথায় পশ্চিমা গণতন্ত্রের বুলি আওড়ান।
একটি দেশে গণতন্ত্র পেতে গেলে সে দেশের জ্ঞানের শীর্ষে যারা থাকেন তাদের অন্তত গভীর বিশ্লেষণী চিন্তা চেতনার অধিকারী হতে হয়।
যাক, এবার দ্বিতীয় ঘটনাটি বলি। এটি ছোট্ট বিষয়। সালমান এফ রহমানকে নিয়ে এটি। বুদ্ধিজীবীদের যে সেটটির কথা বলছিলাম সেই সেটের সদস্যরা যখন তখন এই সালমান এফ রহমানকে ধুয়ে ফেলতেন শেখ হাসিনার সময়কালেও, যখন নাকি তিনি সকল বিরুদ্ধ মতের লোকদের গুম করে দিতেন বলে শোনা যাচ্ছে। তো এই সালমান এফ রহমান যখন গ্রেফতার হলেন তখন আমাদের এই পরম শ্রদ্ধেয় বুদ্ধিজীবীরা রীতিমত আনন্দ প্রকাশ করলেন এই সরকারের এমন দক্ষ কাজ করার ক্ষমতায়। তো যাই হোক, এই বহু রঙে রঙ্গিন মানুষটিকে পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ রিমান্ডে নিলো। জানা গেলো, রিমান্ডে তিনি জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা নাকি বড় প্রজেক্ট থেকে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে চাপ দিতেন। হতেই পারে; এমন খারাপ মানুষ এনারা! কিন্তু এই জায়গাতেই আমি আবারও দ্বৈততা দেখলাম আমার প্রিয় বুদ্ধিজীবীদের মাঝে।
তারা এই ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ থেকে যখন সমন্বয়কদের আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা এবং ডিবি হারুনের সাথে খাওয়া-দাওয়ার ভিডিও ক্লিপ প্রচার করা হলো তখন তারা এইসব প্রচারণা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেন কিন্তু এখন যখন ওই একই বিভাগ থেকে সালমান এফ রহমানের মতো একজন ধিকৃত মানুষের বয়ান প্রচারিত হলো তখন তারা উদ্বাহু নৃত্য করে এটিকে স্বাগত জানালেন।
একটিই যাদু এখানে। সেটি হলো শেখ হাসিনা যে কত খারাপ সেটি দরবেশ সালমান এফ রহমান বলেছেন; কাজেই তার কথা সত্য না হয়েই যায় না। এই যে আমাদের বর্তমান বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃতি এটির কারণেই আমাদের সমাজে সঠিক চিত্র বা ব্যাখ্যা আমরা পাই না।
এ প্রসঙ্গে আমার ২০০৭ সালের সামরিক বাহিনীর সমর্থনে গঠিত ফখরুদ্দীন সরকারের সময়কার একটি ঘটনা মনে পড়লো। সে সময় শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া উভয়কে মাইনাস করার একটা পরিকল্পনা নিয়ে তৎকালীন সরকার অগ্রসর হয়। উভয় নেত্রীর বিরুদ্ধে হাস্যকর সব অভিযোগ তোলা হয়। একটি অভিযোগ ছিল এই যে, জনাব আজম জে. চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। সে সময় পত্রপত্রিকায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রিপোর্টাররা গল্পচ্ছলে নানান হাস্যরসাত্মক বিষয় পাঠকদের উপহার দিতেন।
এই একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরেকটি হাস্যরসাত্মক গল্প সে সময় আমেরিকায় বাংলাদেশের মানুষদের কাছে শুনেছি। জনাব আজম জে. চৌধুরীর কাছে নাকি জানতে চাওয়া হয়েছিলো তিনি ১০০ কোটি টাকা শেখ হাসিনাকে কোথায় এবং কিভাবে দিয়েছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন যে, একটি স্যুটকেসের মধ্যে তিনি ওই টাকাটা বঙ্গভবনে শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছিলো, একটি স্যুটকেসেই এঁটে গিয়েছিলো এত টাকা? তিনি বলেছিলেন, স্যুটকেসটি অনেক বড় ছিল; কত বড় ছিল তা আর তিনি টাকার পরিমাণের সাথে মিলিয়ে রিপোর্টারদের বোঝাতে পারেননি। এর ওপর প্রধানমন্ত্রীর অফিসে এ জাতীয় স্যুটকেস নিয়ে কোনও চেকিং ছাড়া তিনি কীভাবে ঢুকেছিলেন ইত্যাকার প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়ে সে সময় মানুষ প্রচুর হাসিঠাট্টা করেছিলো বলে মনে আছে।
সেসময়ও দেখেছি কিছু বুদ্ধিজীবী ছিল যারা এই ঘটনার শুরু থেকেই শেখ হাসিনা কত বড় দুর্নীতিবাজ ছিলেন সেটি প্রমাণে উঠে পড়ে লেগেছিলেন। এখনও তাই ঘটছে। একজন রাজনীতিককে নানান কারণে আপনি অপছন্দ করতেই পারেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যখন লিখবেন তখন অথেন্টিক যুক্তি এবং প্রমাণ দিয়ে লিখবেন — এমনটাই একজন বুদ্ধিজীবীর কাছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা থাকে।
ইদানিং লক্ষ্য করছি বর্তমান সরকারের যেকোনও ব্যর্থতা আগের সরকারের ওপর চাপাচ্ছেন। শিক্ষক নাজেহালের পুরো দায়টি আগের সরকারের বলছেন। হতে পারে যে, আগের সরকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের তাবেদার বাহিনীর শিক্ষকদের কাছে ক্ষমতা দিয়েছিলো; কিন্তু তাই বলে তাদের এভাবে অপমান করে পদত্যাগ করানো হবে? কই অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে তো এটি হচ্ছে না। কারণ শিক্ষকরা ক্ষমতার দিক থেকে দুর্বল। এটি তাদের সাথে করা যায়। এ আমলে ব্যতিক্রম আশা করেছিলাম। সেটি ঘটেনি।
লেখক: অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, এলিজাবেথ সিটি স্টেট ইউনিভার্সিটি (নর্থ ক্যারোলিনা)।