লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের কাছে থাকা ‘পেজার’ (বার্তা প্রেরণ যন্ত্র) বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত এক শিশু নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক হিজবুল্লাহ যোদ্ধাসহ কমপক্ষে দুই হাজার ৭৫০ জন মানুষ। প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাজধানী বৈরুতসহ দক্ষিণ লেবানন এবং বৈরুতের পূর্বে বেকা উপত্যকার বেশ কিছু অংশে হিজবুল্লাহ ও সাধারণ নাগরিকদের কাছে থাকা যোগাযোগ করার যন্ত্র ‘পেজার’ হ্যাক করে ঘটানো হয় এ বিস্ফোরণ। এই অভিনব কায়দায় ঘটানো পেজার বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হিজবুল্লাহ। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।
এদিকে ইরানের মেহর নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, এ ঘটনায় লেবাননে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোজতবা আমানিও আহত হয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিজবুল্লাহর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে চলা যু্দ্ধে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি হয়ে ওঠে এই পেজার।
মূলত কয়েক মাস আগে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ যোদ্ধাদের স্মার্টফোন ব্যবহার না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন, কারণ ইসরায়েলের কাছে স্মার্টফোন হ্যাক করার বা তাদের থেকে তথ্য বের করার প্রযুক্তি রয়েছে। এরপর থেকেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ‘পেজার’ ব্যবহার করে থাকে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা।
নিরাপত্তা সূত্রের মতে, যে পেজারগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে সেগুলো সর্বশেষ মডেল ব্যবহার করছিল হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। এ বিষয়ে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এলিজাহ ম্যাগনিয়ার বলেছেন, হিজবুল্লাহ তাদের যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে পেজারের ওপর অনেক বেশি নির্ভর হয়ে পড়েছিল। ফলে আগে থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল হিজবুল্লাহ সদস্যদের দেওয়ার আগে পেজারগুলো টেম্পার করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পরদিন থেকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রায় প্রতিদিন রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। সীমান্ত থেকে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ)।
প্রায় ১১ মাস ধরে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে প্রায় ৫৫০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শতাধিক বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
হিজবুল্লাহর পাল্টা হামলায় অন্তত ১৫ ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং ১১ জন বেসামরিক ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।
এছাড়া দুপক্ষের যুদ্ধের কারণে গত ১১ মাসে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের দুই প্রান্ত থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।
অন্যদিকে গত মাসে বৈরুতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে হত্যা করে ইসরায়েল। এরপর থেকেই ইসরায়েলে ওপর প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে উত্তেজনা একটি বড় ধরনের সংঘাতে রুপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।