জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা হত্যার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে অব্যাহতি পাওয়া সমন্বয়কসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হলেও তাদের কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তারা কেউ প্রকাশ্যেও নেই।
বৃহস্পতিবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন এই মামলা করেন। এতে অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনের কথা উল্লেখ আছে।
আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি, আমাদের অভিযান চলমান আছে। আসামিদের ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তোফাজ্জল হোসেন নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কী- এই প্রশ্নে প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, পুলিশ প্রশাসনের সাথে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে, তারা আসামিদের ধরার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা আশাবাদী শিগগির সেটা সম্ভব হবে।
আসামি কারা
মামলায় আসামি হিসেবে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মোহাম্মদ রাজন মিয়া ও রাজু মিয়া, ইতিহাস বিভাগের জুবায়ের আহমেদ ও হামিদুল্লাহ সালমান, ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের আতিকুজ্জামান আতিক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সোহাগ মিয়া, ইংরেজি বিভাগের মাহমুদুল হাসান এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আহসান লাবীবের নাম আছে।
সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়কদের একজন ছিলেন লাবিব।
শামীম মোল্লাকে পেটানোর ভিডিওতে তার নাম আসার পর ছাত্র আন্দোলন তাকে অব্যাহতি দেয়। জানায়, সুষ্ঠু তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অব্যাহতি কার্যকর থাকবে।
ভিডিওতে ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত পাঁচ জনকে দেখা যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছে।
মামলায় কী বলা হল
এজাহারে বলা হয়েছে, বুধবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে শামীম মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক ফটকে এলে কয়েকজন ব্যক্তি তাকে মারধর করেন।
খবর পেয় প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শামীমকে প্রক্টরের কার্যালয়ে নিয়ে যান। তাকে সেই কার্যালয়ের একটি কক্ষে রেখে আশুলিয়া থানাকে বিষয়টি জানানো হয়।
এর মধ্যে ‘কতিপয় ব্যক্তি’ শামীম মোল্লাকে প্রক্টর কার্যালয়ের পাশে নিরাপত্তা কার্যালয়ে নিয়ে যান। প্রক্টর বিষয়টি জানতে পেরে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে নিরাপত্তা কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেন। সেখানে নিরাপত্তাকর্মীদের পাহারায় রেখে প্রক্টর কার্যালয়ে ফিরে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সে সময় কয়েকজন ‘উত্তেজিত হয়ে’ কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে শামীম মোল্লাকে আবারও মারধর করেন বলেও এজাহারে লেখা হয়।
পরে প্রক্টরিয়াল টিম ও নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা শামীম মোল্লার সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের থামান। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ সদস্যরা এসে জানান, শামীমের নামে একাধিক মামলা আছে।
রাত আটটার দিকে শামীমকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। আশুলিয়া থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে শামীমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত নয়টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এজাহারে লেখা হয়, উল্লিখিত ঘটনায় আহসান লাবিব, রাজু আহাম্মদ, মাহমুদুল হাসান রায়হান, জুবায়ের আহমেদ, হামিদুল্লাহ সালমান, মো. আতিকুজ্জামান, সোহাগ মিয়া, মোহাম্মদ রাজন মিয়াসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২০-২৫ জনের সম্পৃক্ত ছিলেন।