ভারতের কট্টর সমালোচক দিসানায়েকই শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে তুমুল গণবিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর পালায়নের পর প্রথমবার নির্বাচনে একেবারে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিয়েছে শ্রীলঙ্কার জনগণ।

দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন ভারত বিরোধী হিসেবে পরিচিত তরুণ নেতা অনুঢ়া কুমারা দিসানায়েক। রবিবার রাতে দেশটির নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করে।

ক্ষমতা ছেড়ে রাজাপাকসকে পরিবারের পালানোর দুই বছরের বেশি সময় পর শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেল শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কার তুলনামূলক কম পরিচিত ‘জনতা বিমুক্তি পেরামুনা’ (জেভিপি) দলের প্রধান অনুঢ়া ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) নামে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন করে প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই প্রেসিডেন্ট হলেন। প্রদিদ্বন্দ্বী হেভিওয়েট প্রার্থীদের তুলনায় দিসানায়েক ছিলেন অনেকটা অপরিচিত রাজনীতিবিদ। এর আগে একবারই কেবল ২০০০ সালে প্রথম সংসদ সদস্য হয়েছিলেন নতুন প্রেসিডেন্ট দিসানায়েক।

এমনকি তার দল ‘জনতা বিমুক্তি পেরামুনা’ (জেভিপি) এর আগে কখনোই ক্ষমতার কাছাকাছি পর্যন্ত যেতে পারেনি। আর নতুন নির্বাচনী জোট এনপিপি গঠনই করেছেন মাত্র দুই বছর হলো। ২০২২ সালে রাজাপাকসে পরিবার দেশ ছেড়ে পালানোর পর নতুন এই জোট গঠন করেন অনুঢ়া।

৫৫ বছল বয়সী এই প্রেসিডেন্ট প্রতিবেশি ভারতের কট্টর সমালোচক। সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা ও গোতাবায়া রাজাপাকসের বিরোধী রাজনীতি করলেও দেশটিতে তামিল বিদ্রোহ দমনে রাজাপাকসে সরকারকে তিনি সমর্থন করেছিলেন। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে তার দল দেশের ওপর ভারতের প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত হিসেবে বিবেচনা করে। অনুঢ়া এবং তার জেভিপিকে চীনপন্থি হিসেবেই দেখা হয় শ্রীলঙ্কায়।

অনুঢ়ার বিপরীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েছেন পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের বড় ছেলে নমাল রাজাপাকসে, সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে সজিথ প্রেমাদাসা এবং দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট জে আর জয়াবর্ধনের ভাগনে সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েক ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়াগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহে।

শনিবার ভারত মহাসাগরীয় এই দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়। প্রথম দফা ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, একজন প্রার্থীও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। এরপর দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনা করে রবিবার রাতে নির্বাচন কমিশন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের নেতা অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েককে বিজয়ী ঘোষণা করে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা আসার পর এনপিপি জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন অনূঢ়া। প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ে তার শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানটি হবে অনাড়ম্বর।

খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধসহ নিত্যপণ্যের তীব্র সংকটের প্রতিবাদে ২০২২ সালে সড়কে নামেন শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ। প্রবল জন–অসন্তোষের মুখে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ গণ–আন্দোলনে রূপ নেয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ হাজারো মানুষ ঢুকে পড়েন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনে। গোতাবায়া দেশ ছেড়ে পালান। এরপর রণিল বিক্রমাসিংহকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে দেশটির সংসদ। দুই বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রণিল বিক্রমাসিংহ অংশ নিলেও নির্বাচনী বৈতরণি উৎপরাতে পারেননি।

নতুন নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে রাজাপাকসে পরিবার এবং পুরনো ক্ষমতা বলয়ের টানা দেড় দশকের বেশি সময়ের একক আধিপত্যের চূড়ান্ত অবসান ঘটল। ১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি শাসন করেছে দুটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল বা তাদের জোট বা তাদেরই কোনো অংশ। এর মধ্যে একটি রাজাপাকসে পরিবারের নেতৃত্বাধীন দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)। দলটি থেকে একাধিকবার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশত্যাগের আগে সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ছিলেন তার ছোট ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসে।

শেয়ার করুন