কবি নবারুণ ভট্টাচার্য তাঁর ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়’ কবিতায় মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠা দেশকে নিজের দেশ বলতে চাননি। তাঁর কবিতার দেশে অসংখ্য মৃত্যু কাম্য ছিল না। কাম্য ছিল না মানুষে মানুষে বিভেদ ও বৈষম্য। এই আকাঙ্ক্ষার বাইরে আমরা কেউই নই। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আমাদের আকাঙ্ক্ষার দেশ শুধুমাত্র স্বপ্ন। যে স্বপ্ন আমাদের পূর্বসূরীরা একাত্তরে দেখেছিলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিলেন তাঁরা, তা আজও অধরা। রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিশ্বাসঘাতকতা, লাগামহীন দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, অপশাসন ও প্রকট বৈষম্যের দরুন নানা সময়েই এই দেশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শচ্যুতের মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রকাঠামোয় পরিণত হয়েছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরতন্ত্র ভাবাপন্ন সরকারের পতন করানো গেলেও দেশের মানুষের মনস্তাত্ত্বিক স্বৈরাচারী চেতনাকে উৎখাত করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রতিশোধ পরায়ণতা, রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও পরমত অসহিষ্ণুতায় দেশে মুহূর্তেই নৈরাজ্যবাদের উত্থান ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সামাজিক অস্থিতিশীলতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে নানামুখী অপরাধ ও অপতৎপরতা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
চলমান রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে দেশকে স্থিতিশীল করা, বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং গুজব মোকাবিলায় অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা এখন মুখ্য চ্যালেঞ্জ। এসব বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার বক্তব্য ব্যতীত কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে সমর্থ হয়নি। বরং সেনা শাসনের প্রেক্ষাপট তৈরির অবস্থায় সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা অর্পণ করে নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়েও। দেশজুড়ে চলমান গণহত্যা, লুট, ছিনতাই, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, আধিপত্য বিস্তার ও দখলদারিত্ব বন্ধেও ফলপ্রসূ কোনো দৃশ্য আমরা দেখতে পাইনি।
বর্তমান বাংলাদেশ মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে, পরিণত হয়েছে বিভীষিকাময় এক মৃত্যু উপত্যকায়। এই মৃত্যু উপত্যকায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও হুমকির মুখে পড়েছে। বলা চলে হয়তো গণমাধ্যমগুলোও নিজ থেকেই মৃত হয়ে যাচ্ছে সত্য প্রকাশের সুযোগ সংকোচিত হওয়ায়। সরকার পতনের পরপরই একাত্তর টিভিতে ভাঙচুর করা হয়েছে, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে মিডিয়া পাড়ার এটিএন টিভি অফিসে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর এক দল লোক গণমাধ্যম দখলে নিয়ে দলীয় সাংবাদিকদের বসিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই ভাবে দখলের অভিযোগ উঠেছে ‘নিউজ ২৪’, ‘সময় টিভি’ এবং ‘মাই টিভি’ নিয়েও। ‘কালের কণ্ঠ’ ও ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’সহ ৫টি জাতীয় পত্রিকা এবং অন্তত ২৫টি আঞ্চলিক পত্রিকার দফতরও দখল করা হয়েছে বলে বিদেশি গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকার প্রায় ১৫৫ এবং চট্টগ্রামের ২৮ জন সাংবাদিককে খুন, গণহত্যা, মাদক চোরাচালান-সহ বিভিন্ন গুরুতর মামলার আসামির তালিকায় ঢোকানো হয়েছে, যা উৎকণ্ঠার বিষয়। এডিটর্স গিল্ড-এর বিবৃতি অনুযায়ী, ৬৪টি জেলার অজস্র স্থানীয় সাংবাদিককে হেনস্থার উদ্দেশ্যে মামলা দিয়েছে ইউনূস সরকার। নির্বাচিত সভাপতি ও সম্পাদককে তাড়িয়ে দখল করা হয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ দেশের বিভিন্ন প্রেস ক্লাব। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও শিল্প কারখানা দখল করা হয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে পুড়িয়ে দেওয়াও হয়েছে। যা আমাদের অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। এসব কাজকে বৈধতা দিতে ভুক্তভোগীদের আওয়ামী লীগ ও স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। যা বিচারহীনতাকেই শুধু নির্দেশ করে না, বরং প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় এবং আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়।
৫ আগস্টের পর থেকে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান ও মব জাস্টিসের নামে গণহত্যা। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও মন্দির-মূর্তি ভাঙচুর, পূজা উদযাপনে জিজিয়া কর স্বরূপ চাঁদার দাবি, মাজারে হামলা ও ভাঙচুর, আহলে সুন্নাত-আহলে হাদীস অনুসারীদের মধ্যে সংঘাত, কাদিয়ানীদের ওপর আক্রমণ, আদিবাসী বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের ওপর আক্রমণ সাম্প্রদায়িকতা উত্থানের বড়ো উদাহরণ। পাহাড়ের অস্থিরতাকে শুধু পাহাড়ি ও বাঙালি জাতিগত সংঘাত হিসেবে দেখলে হবে না। এর পেছনে উগ্র মুসলিম সাম্প্রদায়িকতাও সক্রিয় রয়েছে। দেশব্যাপী ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম ভাঙচুর, ২২ জেলায় শিল্পকলা একাডেমি ও শিশু একাডেমিতে অগ্নিসংযোগ এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও পাঠাগারে হামলার ঘটনাও মৌলবাদ উত্থানকে স্বীকার করে। রাজশাহীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবঘুরে তোফাজ্জল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম ও চট্টগ্রামে শাহাদাত হত্যাকাণ্ড বুয়েটের আবরার হত্যার নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে। গান গেয়ে গেয়ে ঠান্ডা মাথায় শাহাদাতকে হত্যা করার এমন নির্মম দৃশ্য নজিরবিহীন। অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে আড়ালে থাকা শিবির ও ছাত্রদলের অনুসারীরাই এই হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব আলোচিত নির্মমতা বর্তমান বাংলাদেশের ঘৃণ্য গণহত্যার ঘটনা হিসেবেই বিবেচ্য হবে।
প্রতিদিন দেশের নানাপ্রান্তে নিত্য নতুন হত্যাকাণ্ড ও ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটিত হলেও সরকার পক্ষকে তা অস্বীকার করতে দেখা যায়। দেশে এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের অধিক মানুষ গণপিটুনিতে মৃত্যুবরণ করলেও ক্ষোদ অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান তা স্বীকার না করে বলেছেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়নি’। তার এই বক্তব্য শুধু আপত্তিকরই নয়, বরং তার বক্তব্য বিচার না করার মানসিকতাকেই প্রকাশ করে। এই সরকারের আমলেও ঢালাওভাবে মামলা ও গণগ্রেফতারে মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গত কয়েক দশকের শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতার অংশ হয়ে উঠেছে। চরম সত্য এই যে, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট আচরণ আওয়ামী আমলের চেয়েও বর্তমানে অধিকতরভাবে মাথাচাড়া দিচ্ছে। দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা, পাহাড়ে সংঘাত, পোশাক শিল্পখাতে অস্থিরতাসহ যেসব ঘটনা ঘটছে, তার প্রত্যেকটার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা খোঁজা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে এসবের পেছনে পরাজিত শক্তির যোগসাজশ রয়েছে। দোষারোপের পুরাতন এই সংস্কৃতি দেশের আপামর জনসাধারণ আর গ্রহণ করছে না। তারা বলছে, যেখানে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও দেশ ছেড়েছেন, জীবন বাঁচাতে পালাতে বাধ্য হয়েছেন, সেখানে যে কোনো ঘটনায় তাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়াটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দায় এড়ানোর নামান্তর। তারা এসব বিশ্বাস করছে না। তারা চায় প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সুবিচার। সেই সঙ্গে সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রকাশ ও সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত তাদের নানা কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে উঠছে জনসাধারণ। জুলাই আন্দোলনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত গণহত্যাকারী জামায়াত ও শিবিরের সম্পৃক্ততা প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তি বোধ করছেন অনেকেই। প্রশ্ন উঠেছে কোটা সংস্কার আন্দোলন কোটা সংস্কারের উদ্দেশ্যে নয়, আওয়ামী সরকার পতন এবং অনেকাংশে দেশের বিরুদ্ধাচরণের উদ্দেশ্যেই সংঘটিত হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীসহ জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে কৌশল হিসেবে কোটা ইস্যুকেই টোপ বানানো হয়েছিল মাত্র। বর্তমানে সমন্বয়কদের অনেকে তা স্বীকারও করেছেন।
আন্দোলনকে সফল করতে সরকারের সঙ্গে তারা আলোচনায় কেন যায়নি কিংবা আদালতের রায় পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা না করে আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে কেন, তার কারণও এখন সুস্পষ্ট। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পেছনে ঠিক কাদের মদদ ছিল তাও সুস্পষ্ট হতে শুরু করেছে। বলা যায় বাংলাদেশের এই গণঅভ্যুত্থান ইতিহাসের পাতায় একদিন বিতর্কিত অভ্যুত্থান হিসেবে চিহ্নিত হবে। কেননা শেখ হাসিনা সরকার পতনের জন্য এই আন্দোলন হয়েছে এমনটা আর বলা যাচ্ছে না। দেশের চলমান ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করলে উপলব্ধি করা যায়, পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশ চেতনার পরিপন্থী শক্তির উত্থানের আন্দোলন ছিল এটি। বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন ও পাকিস্তানী শক্তির অতি তৎপর হওয়া এই ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষত একাত্তর প্রশ্নের মিমাংসা না হতেই পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ, বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শাহাদাত বার্ষিকী পালনে বাধাদান, তাঁর স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ সংস্কার নিয়ে নীরবতা, পাকিস্তানের জাতির জনক জিন্নাহর মৃত্যুদিন পালন, জাতীয় সংগীত ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি, বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সম্প্রচারের তোরজোর বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থার উত্থানকেই প্রমাণিত করে। শুধু তাই নয় মুক্তিযুদ্ধের বাইনারি তৈরির চেষ্টায় ‘চব্বিশের মুক্তিযুদ্ধ, দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ শব্দ ব্যবহার ভাষার রাজনীতিকে সামনে এনেছে। প্রধান উপদেষ্টার বিভিন্ন বক্তব্যে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের কথা এলেও, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের কথা শোনা যায়নি, বঙ্গবন্ধুর কথা তো নয়ই। এর বিপরীতে নানা সময়ে সমন্বয়কদের বক্তব্যে কৌশলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করতে দেখা গিয়েছে। একজন সমন্বয়ক বিবিসিকে বলেছেন ‘বঙ্গবন্ধু কোনো অনুসরণীয় চরিত্র নয়’! বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতি নিয়ে আপত্তি তুলতেও দেখেছি আমরা। এর বড়ো উদাহরণ বাঙালি সংস্কৃতিকে কাউন্টার দিতে দেশব্যাপী কাওয়ালির আয়োজন। তারা কাওয়ালিকে বাংলার ঐতিহ্য বলেও দাবি করেছে। একই সঙ্গে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হস্তান্তরের গুঞ্জনও সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলছে। কেননা পশ্চিমা এই পরাশক্তি একাত্তরে আমাদের বিরোধিতা করেছে এবং বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাদের নানামুখী ষড়যন্ত্র আলোচনায় এসেছে। তাদের মিত্র হিসেবে জামায়াতের সম্পর্কও আলোচনার বাইরে নেই।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেই জামায়াত নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে এবং জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়োগ দিতে শুরু করে। ফলে এই সরকারের জামায়াতঘেষাও সন্দেহের উদ্রেক সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে বিএনপিও তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দাবি করেছে ‘ইউনূস সরকার বিএনপিকে পাত্তা দিচ্ছে না’। সরকারে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন ও জামায়াতকে নিয়ে আগামী সংসদে যাওয়ার চেষ্টাও আলোচিত হচ্ছে নানা মহলে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন মার্কিন ঘনিষ্ঠ ইউনূস সরকার শুধু নিজেই ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে না, তারা জামায়াতকেও ক্ষমতার অংশ করতে তৎপর। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মার্কিনিরা ‘আরব বসন্ত’র ছক কষেছে বলে বহু আগেই খবর চাউর হয়েছিল এবং তা তারা ঘটিয়েছে, এখন যা আমরা দৃশ্যপটে দেখছি। সেই সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ এই সংগঠন প্রকাশ্যে এসে নিজেদের বৈধতা দাবি করেছে এবং এই আন্দোলনে নিজেদের অবদানের কথাও প্রকাশ করেছে। যার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান যতটা না বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, ততোধিক তা মার্কিন মদদপুষ্ট বাংলাদেশ চেতনার বিরোধী শক্তির আন্দোলন। এই আন্দোলনে নানা কারণে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করেছে জামায়াত ও ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীসহ মার্কিনপন্থী বিভিন্ন শক্তি। যা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এমন পরিস্থিতিতে গণমানুষের জাতীয় ঐক্য ও প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক শক্তির ঐক্য সম্ভব না হলে বাংলাদেশ পাকিস্তানী চেতনায় সিরিয়ার দিকেই অগ্রসর হবে। এর বহু আলামত আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি। বিধায় বৃহৎ স্বার্থে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরিভাবে প্রয়োজন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে অতিতের বৈরিতার অবসান ঘটানো আবশ্যক। অন্যথায় আগামীর বাংলাদেশ শুধু নিজেই অস্থিতিশীল হবে না, এই উপমহাদেশকেই আশান্ত করে তুলবে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত শঙ্কার বিষয়।
লেখক: কবি ও সমাজচিন্তক