সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর ইজারা নেওয়া সরকারি ৩০ বিঘা জলাশয় জোর করে দখলের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক জাহিদ ফকিরের বিরুদ্ধে। ওই জলাশয়ে বর্তমানে তিনি তার নিজস্ব লোক দিয়ে মাছচাষ করছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিমগাছী সমাজভিত্তিক মৎস্যচাষ প্রকল্পের ওই জলাশয় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ৮৩টি পরিবার টানা ১২ বছর ধরে সরকারি স্বার্থ রক্ষা ও বিধি মোতাবেক ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের শীতলাই দিঘি নামের ওই জলাশয়টি বিএনপি নেতা জাহিদ ফকির জোর করে দখলে নেন।
শীতলাই দিঘির সুফলভোগী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অজিত কুমার জিতু অভিযোগ করে বলেন, “বিএনপি নেতা জাহিদ ফকিরের নেতৃত্বে দেশীগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুলতান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজেম ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে স্ট্যাম্পে পাঁচ লাখ টাকা উল্লেখ করে সই নেন। স্ট্যাম্পে লেখা ওই টাকাও তারা দেননি। উল্টো বলছেন, ‘১৪ মাস তো খাইসোস, আর ৮ মাসের জন্য ডিসিআর কাটা বাবদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে চুপচাপ থাক’।”
তিনি আরও বলেন, আমরা এ পুকুরে মাছচাষ করেই প্রতিবছর পূজা উদযাপন করি। কিন্তু এবার পুকুর দখলে নেওয়ায় আমরা পূজা উদযাপন নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
সুফলভোগী দীপক কুমার মাহাতো বলেন, ‘স্থানীয় হতদরিদ্র ৮৩ জন সদস্য একযুগ ধরে পুকুরটিতে মাছচাষ করছি। এসব সদস্যসের ৭০ জনই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর। ওই পুকুরে মাছচাষ করে বছরে ১৫-২০ লাখ টাকা আয় হয়। যা আমরা সমানভাবে ভাগ করে নেই। এতে আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হতো না। কিন্তু পুকুরটি বিএনপির নেতারা দখলে নিয়েছেন। আমরা এখন কী করবো? এ বিষয়ে কোথাও অভিযোগ দিলে সমস্যা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তারা।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক জাহিদ ফকির বলেন, ‘পুকুরটি হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা ইজারা নিয়ে চাষ করেন। তাই স্থানীয় কিছু লোকজন পুকুরটি ছাড়তে চাপ দেন। এজন্য একদিন সেখানে গিয়েছিলাম বিষয়টি সমাধান করার জন্য। গিয়ে দেখি তারা ওই পুকুরে আর মাছচাষ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে রায়গঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ফরিদুল ইসলাম খোকন ও উজ্জ্বল সরকার পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে এক বছর মেয়াদে স্ট্যাম্পে চুক্তি করেন।’
দেশীগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুলতান মাহমুদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকার পতনের পর স্থানীয় কিছু লোকজন পুকুরটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে সুফলভোগীরা বিষয়টি আমাদের জানালে কয়েকজন গিয়ে সমাধান করে দিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে নিমগাছী সমাজভিত্তিকি মৎস্যচাষ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) শহিদুল ইসলাম বলেন, শুনেছি ইজারা নেওয়া সুফলভোগীদের কাজ থেকে জোর করে স্ট্যাম্পে লিখে নেওয়া হয়েছে। তবে এসব পুকুর সাব লিজ নেওয়া বা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুফলভোগীরা এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।