এখন একটা কথা খুবই বলা হচ্ছে “দ্বিতীয় স্বাধীনতা, যা আমাদের ন্যায় অনেক কম বুদ্ধির মানুষের মাথায় কোনো অর্থ নিয়ে আসে না। হয়তবা, বর্তমান প্রজন্মের চেয়ে আমাদের বুদ্ধি সুদ্ধি কম । কেননা ১৯৭১ সনের যুদ্ধ ছিল একটি রাষ্ট্র তৈরির জন্য। আর ২০২৪ এ যা হয়েছে (জুলাই-আগস্টের ৫ পর্যন্ত) তা হচ্ছে একটি সফল ছাত্র বিদ্রোহ, যা শুরু হয়েছিল একান্তই ছাত্র আন্দোলন হিসাবে এবং ক্ষমতাসীনদের আত্মম্ভরিতা, এগুমেগী, ভাঁরাসী অবিমৃশ্যকারিতার কারণে পরিণত হয়েছিল ‘জনতার’ অংশ গ্রহনের কারণে, একটি সফল গণ-আন্দোলনে, যাঁর ফলশ্রুতিতে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারের অবসান ঘটে (যেমনটি হয়েছিল জিম্বাবুয়েতে রবার্ট মুগাবের পতনে)।
সুতরাং একটি নতুন দেশ তৈরীর সংগ্রাম আর একটি সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনের কোনই তুলনা হতে পারে না। একটি দেশ তৈরীতে যাঁরা ভূমিকা রাখতে পারেনি বা রাখেনি, তারাই দেশ তৈরীর বিষয়টিকে বিতর্কিত বা ছোট করে দেখতে সরকার পরিবর্তনকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সমপর্যায়ের বলে বেড়ায়।
২. এ কথা-অবশ্যই বিবেচনার যোগ্য যে, পদত্যাগী কর্তৃত্ববাদী সরকারের নির্বাচিত হওয়ার বা জনপ্রতিনিধিত্বশীল হওয়ার দাবির অসারতা রয়েছে (বিশেষতঃ যখন তার রেটিং প্রায় শূন্যের কোঠায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বের অযোগ্যতা ও জনবিচ্ছিন্নতার কারণে)। কিন্তু যাদের ক্ষমতারোহনের পেছনে কোনো ম্যান্ডেটই নেই (সামরিক বাহিনী তথা সশস্ত্রবাহিনী ও এনজিও এবং ঢাল নেই তলোয়ার সেই এমন সব দল এবং সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক গোষ্ঠি- বিএনপি-জামাত-হেফাজত প্রমুখ) তারা যখন জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের কথা বলেন, তখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোন সংজ্ঞায়ই তা ফেলা যাচ্ছে না। রক্তের আখরে লেখা সংবিধান, রক্তের দামে কেনা পতাকা আর সঙ্গীত আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে দিয়ে পরিবর্তন করার চিন্তা আসে আপনার কোন ম্যান্ডেট থেকে? বিগত সরকারের সমর্থক রাজনৈতিক দলসমূহকে কার্যতঃ কাজ করতে না দিয়ে; যা প্রতিশ্রুত ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত ভাবেই অকার্যকর রেখে, আপনি কীভাবে ঐক্যমত্য তৈরি করবেন?
এটা সত্য যে, অনির্বাচিত ক্ষমতার স্বাদই আলাদা। কেননা এদের অনেকেরই নির্বাচিত হয়ে আসার কোনো যোগ্যতা নেই।
লেখক: রাষ্ট্রচিন্তক।