বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তদন্তের জন্য জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পুলিশ সদরদপ্তরের কাছে একগুচ্ছ তথ্য চেয়েছে। পুলিশও বলছে, যে কোনো ধরনের তথ্য সরবরাহ করে মিশনকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বাহিনী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে তথ্যসহ সব ধরনের সহযোগিতা পুলিশ করবে।
একাধিক সূত্র বলছে, গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৪৬ দিনে কী ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তা জানার চেষ্টা করছে জাতিসংঘ। এর জন্য দায়ী কারা, তার বিস্তারিত তথ্য জানবে তারা। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পুলিশ সদরদপ্তরে চিঠি দিয়ে বেশ কিছু তথ্য জানতে চেয়েছে।
গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময় মিলিয়ে দেড় মাসে সারাদেশে কতজন মারা গেছেন, তাদের পেশাগত পরিচয় কী, কতজন আহত হয়েছেন, কতটি মামলা হয়েছে, কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে, তা জানতে চায় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ মোট কত রাউন্ড গুলি করেছে, আন্দোলনকালে কোন কোন কর্মকর্তা মাঠ পুলিশকে গুলির নির্দেশ দিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে কতজন মারা গেছেন, কোন কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে, কী ধরনের সহিংসতা হয়েছে– এ ধরনের আরও নানা তথ্য জানতে চেয়েছে জাতিসংঘ মিশন। তাদের তদন্ত দলের চাহিদানুযায়ী ইতোমধ্যে সারাদেশ থেকে তথ্য আনতে পুলিশের সব ইউনিটে চিঠি দিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।
সদরদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন ইউনিট তথ্য সংগ্রহের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এনেছে। সব ইউনিট থেকে তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর তা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত দলের কাছে হস্তান্তর করবে পুলিশ সদরদপ্তর।
পুলিশ সদরদপ্তরের আরেক কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্টের পর অভ্যন্তরীণ আটটি পৃথক সংস্কার কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। বাহিনীর কার্যক্রমের সংস্কার প্রস্তাবের জন্য এরই মধ্যে তারা একাধিক বৈঠক করেছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি থেকে সরকার পতন আন্দোলন এবং এর পরবর্তী সময়ে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে সবার কাছে তথ্য চেয়েছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল।
সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একটি ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে সেখানে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বিক্ষোভের মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করছে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস। দলটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, চিকিৎসা পেশাজীবী এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে এই তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের সত্যতা উদ্ঘাটন, দায়দায়িত্ব চিহ্নিতকরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ বিশ্লেষণের পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সুপারিশ করবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল। এটি কোনো অপরাধ অনুসন্ধান বা আইনি তদন্ত নয় জানিয়ে বলা হয়, এটি যে কোনো জাতীয় ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া থেকে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
এই তথ্য অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি কঠোরভাবে গোপনীয়। তদন্ত চলাকালে তদন্ত দলের সদস্যরা কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেবেন না। তারা সবাইকে তথ্য অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করেছেন।
জাতিসংঘের হাইকমিশনার দপ্তরের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দলের নেতৃত্বে রয়েছেন।