পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেছেন, কেউ যদি সত্যিকার অর্থে অপরাধ করে থাকে তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে। কেউ যদি নিরীহ ও নিরপরাধ হয়ে থাকেন তাহলে কারো কোনো প্রকার ভয় পাওয়ার কারণ নেই। নিরপরাধ কাউকে আসামি করলে যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যে বের হয়ে যাবে। কোনো অফিসার বা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেউ নিরপরাধ কাউকে ধরার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত না। মামলা করলে, আসামি হলেই কাউকে ধরতে হবে, আইন এটা বলে না।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের দামপাড়ায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি জায়গায় বেশি সংস্কার সাধন করতে চাই, সেটি হলো পুলিশের লেথাল ওয়েপন বা মারণাস্ত্রের ব্যবহার করার ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক একটা স্ট্যান্ডার্ড অনেক ক্ষেত্রে মানা হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের সদস্যরা যখন জাতিসংঘরে মিশনে যায়, তখন যে স্ট্যান্ডার্ড থাকে। সেই স্ট্যান্ডার্ডের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় ব্যত্যয় হয়েছে, সেগুলোও আমাদের আলোচনায় আছে। পুলিশের প্রশিক্ষণে সফট স্কিলের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। অ্যাপ্রোচের ক্ষেত্রে আমাদের কী কী ভুল হয়েছিল, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখি ইউজ অব ফোর্স থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে পুলিশের যে কাজ তা কতটুকু মানবিক করা যায়, সেই বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, ‘জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া পুলিশিং করা যায় না। ক্ষমতার উৎস জনগণ। এই জনগণের সমর্থন লাগবে, আমার কাজের ক্ষেত্রে। সেই জায়গায় আমরা কাজ করছি।
আইজিপি বলেন, ‘আমাদের অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলছে। পুলিশের খোয়া যাওয়া ৭৫ শতাংশ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আর ২৩৮টি অবৈধ অস্ত্র যৌথ বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ গুজব সৃষ্টি করে সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে।’
পুলিশের সংস্কারের বিষয়ে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশে সংস্কার দরকার আমরা যেমন অনুধাবন করছি। পুলিশের সব সদস্য এটা অনুধাবন করছেন। সরকার কিন্তু এই বিষয়ে অনেক আন্তরিক। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পুলিশ সংস্কারে কমিশন করা হয়েছে। যার প্রধান করা হয়েছে একজন অভিজ্ঞ সাবেক আমলাকে। সেখানে পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান কর্মকর্তাও থাকবেন। তারা তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। আমরা নিজেরাও কমিটি করেছি। যে দাবি পুলিশের সাধারণ সদস্যরা করেছিল, তার প্রতিটি দফা নিয়ে আলোচনা করে কোন ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিচ্ছি। সংস্কার করতে অনেক সময় লাগবে। পুলিশের ডিউটির সময়, ড্রেসসহ অনেকগুলো বিষয় নিয়ে সংস্কার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের সময় জনবল, যানবাহন স্বল্পতাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। সবাই আশ্বস্ত করেছে, এখন সবাই কর্মের ক্ষেত্রে অত্যন্ত আন্তরিক। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, কিভাবে মানুষের সেবায় পুরোপুরিভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি। সব পুলিশ নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে চায়।’
পুলিশের আইজিপি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন আমাদের সদস্যসহ প্রত্যেকটি মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করা হবে, বিচার করা হবে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশিন কাজ করছে। সরকার কিন্তু আন্তরিক। যারা নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে প্রতিটি ঘটনার বিচার হবে, সুষ্ঠু তদন্ত হবে।’
আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টকারী ঘটনা ঘটবে না। এই দেশ সব মানুষের। এই দেশ হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-মুসলমান সবার। যারা এই দেশের নাগরিক প্রতিটি বিষয়ে সবার সমান অধিকার। যেকোনো অপতৎপরতা রুখে দিতে চাই। সামনে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গা উৎসব। তারা তা উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করবে। সেখানে আমাদের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। কেউ যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেই ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকব। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করতে চায়, তাকে কঠোর আইনের আওতায় আনা হবে।’
মব জার্টিস নিয়ে পুলিশের আইজিপি বলেন, ‘ঢাকা ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে মব জার্টিসের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা একটা বিষয় ক্লিয়ার করতে চাই, মব জাস্টিসের নামে কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। তাহলে যার প্রতি মব জাস্টিসের নামে অন্যায় করলেন, অবিচার করলেন সেই ব্যাপারে আপনাকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আপনাকে আইনের আওতায় আসতে হবে। আমরা এই ব্যাপারে অনেক কঠোর।’
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম দেশের শত্রু। যারা এগুলোতে জড়িয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা তৎপর। কেউ কেউ জামিন পেয়েছে, জামিন একটি আইনি অধিকার। আমরা যদি দেখি আবার জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে, সেখানে তাকে আবার আইনের আওতায় আনবো। আমাদের মনিটরিং কিন্তু সব সময় আছে। কোনো অপরাধে কারো জড়িত হওয়ার সুযোগ নেই।’
এ সময় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।