যুবদল নেতা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে সুলতান মনসুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুলতান মনসুর
ফাইল ছবি

কানাডা থেকে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে আটক সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদকে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভোরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলে তাকে হেফাজতে নেয় ডিবি। এরপর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরে তাকে আদালতে তোলা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার এসআই তন্ময় কুমার বিশ্বাস তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. রাগীব নূর তার পাঁচ দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টন এলাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি। ওই দিন ঢাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সমাবেশ করে। আর মতিঝিলে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী।

নির্বাচনের আগ দিয়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশের সেই দিন কাকরাইল-পল্টন এলাকায় বিএনপি-আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের মধ্যে যুবদল নেতা শামীমের প্রাণ যায়।

এ ঘটনায় পল্টন মডেল থানার মামলায় সোমবার গ্রেপ্তার দেখানো হয় ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মনসুরকে। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন।

মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে হওয়ার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের পাল্টা সমাবেশের কারণে রাজধানীতে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেদিন দুপুরে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাজির হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা বিএনপির মহাসমাবেশে আক্রমণ চালায়।

এজাহারে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিএনপির সমাবেশে আক্রমণ করে এবং নেতাকর্মীদের গুরুতরভাবে আহত ও হত্যার চেষ্টা চালায়। তাদের হামলায় যুবদল নেতা শামীম নিহত হন এবং শতাধিক বিএনপি কর্মী আহত হন।”

তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ডে আবেদনে বলেন, “এর আগে গ্রেপ্তার আসামিদের দেওয়া তথ্য মতে, এজাহারের ঘটনার সঙ্গে আসামি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এবং অন্য আসামিদের শনাক্ত ও অবস্থান জানতে তাকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিন রিমান্ড প্রয়োজন।”

তুমুল গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একের পর এক দলটির নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেপ্তার হচ্ছেন। তবে সুলতান মনসুর গ্রেপ্তার হলেন সরকার পতনের আগের একটি ঘটনায় দায়ের করা মামলায়।

স্বাধীন বাংলাদেশে সুলতান মনসুরই ছাত্রলীগের একমাত্র সভাপতি, যিনি ডাকসুর ভিপি হতে পেরেছিলেন। ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে যে কজন সরব হয়েছিলেন, সুলতান মনসুর তাদের একজন।

কিন্তু ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে সংস্কারপন্থী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় আওয়ামী লীগে অপাঙক্তেয় হয়ে পড়েন তিনি। পরে কামাল হোসেনের দল গণফোরামে ভিড়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন।

২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়েন। ওই জোটের হয়ে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে নির্বাচন করেন সুলতান মনসুর।

নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবির মধ্যেও সুলতান মনসুর জিতে যান। গণফোরাম দুটি আসনে এবং বিএনপি ছয়টি আসনে জয় পায়।

পরে অবশ্য তিনি বলেছিলেন, “আমি অন্য কোনো দলে জয়েন করি নাই। আমি কখনও আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসিনি, বহিষ্কৃতও হইনি।”

আর চলতি বছর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক না পেলে তিনি নির্বাচন করবেন না।

শেয়ার করুন