শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মুহাম্মদ ইউনূস সরকার গঠনের পর থেকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে নানা ধরনের অপপ্রচার ও আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে সোরগোল যেন থামছেই না। সরকার গঠনের প্রাক্কালেই ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বাতিল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী পালনে বাধা, ধানমন্ডি ৩২-এ অশ্লীল ভঙ্গিতে হিন্দি গান বাজিয়ে অপউল্লাস, বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে ইচ্ছুকদের নানাভাবে হয়রানি ও নিপীড়ন, এমনকি সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে বাধাদান ও তাদের উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে । যা বেশ সমালোচনার জন্ম দেয়।
১৫ আগস্ট প্রসঙ্গে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সমন্বয়ক সারজিস আলমের বক্তব্যও ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং বঙ্গবন্ধু বিরোধী। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা গোলাম আযমের পুত্র আমান আযমীর মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ও জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকে ঘিরেও জোর সমালোচনা হয়েছে, প্রতিবাদ এসেছে নানা মহল থেকে। এসব নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিরোধী শক্তির বিভিন্ন তৎপরতা। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানের গণহত্যার অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াত-শিবির নিজেদের তৎকালীন কর্মকাণ্ডকে মিথ্যাচার উল্লেখ করে পাঠ্যপুস্তক থেকে সেসব ইতিহাস বাতিলের দাবিও তুলেছে। শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কাইয়ূমসহ তাদের ছাত্রনেতারা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী তাদের অপকর্মকে অস্বীকার করছে। তাদের দাবি, একাত্তরের কোনো ঘটনার সঙ্গেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের এই বক্তব্য শুধু মিথ্যাচারই নয়, সত্যের অপলাপ এবং ইতিহাস বিরোধী।
সাংবাদিক মুহাম্মদ মহিউদ্দীনের সঞ্চালনায় নিউইয়র্ক ভিত্তিক বাংলা গণমাধ্যম ‘ঠিকানা’র এক সাক্ষাৎকারেও জামায়াতের বর্তমান আমির শফিকুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তা এড়িয়ে যান এবং বলেন তারা আর অতীতের দিকে ফিরে তাকাতে চান না। যেন জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তিই করেন ক্ষমতাসীন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কে ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বিরক্ত প্রকাশ করেন এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাংবাদিককে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ভিন্ন জবাব দেন। তিনি বলেন, “আমরা ‘রিসেট বাটন’ পুশ করেছি; এভ্রিথিং ইজ গন; অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে”। তার দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু ‘পুরনো দিনের কথাবার্তা’। তার কথা বলার ভঙ্গি থেকে উপলব্ধি করা যায়, মুক্তিযুদ্ধ অতীতের বিষয়, যার প্রয়োজনীয়তা শুধু ফুরিয়েই যায়নি, যা নিয়ে এখন কথা বলাও অবান্তর! একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুর, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ ধ্বংস করে ফেলা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গবেষক মহিউদ্দিন আহমদও যেন ইউনূস সরকারের বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গাচ্ছেন।
বিবিসিকে দেওয়া তার ভাষ্য, ‘আমি পলাশীর যুদ্ধের কথা ভুলে গেছি, পানিপথের যুদ্ধের কথা ভুলে গেছি। সিপাহী বিদ্রোহের কথা ভুলে গেছি। সাতচল্লিশও ভুলে গেছি। এখন যে জেনারেশন এই পরিবর্তন এনেছে, তাদের বয়স ২৫-৩০ বছরের নিচে। তারা একাত্তর দেখে নাই। ঠিক যেভাবে আমি পলাশী দেখি নাই’। তিনি বলতে চাচ্ছেন, আমরা অতীতের অনেক ইতিহাস ভুলে গিয়েছি, আমরা অতীতের কোনো কিছু দেখি নাই মানে, তা অস্বীকার করব কিংবা তা ‘রিসেট বাটন’ পুশ করে মুছে ফেলব। ইতিহাসের এই গবেষককেও যদি প্রশ্ন করা যায়, আপনি ইতিহাস নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি করেন কেন? সেটা কি ইতিহাস অস্বীকার কিংবা মুছে ফেলার জন্য? তার উত্তর নিশ্চিতভাবে ‘না’ সূচকই হবে। উত্তর ‘না’ সূচক হলে বলব, আদতে অতীতের ইতিহাস আমরা কোনোভাবেই ভুলে যাই না। ভুলে যাই না বা ভুলে যেতে চাই না বলেই আমরা ইতিহাস পড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিহাস পড়ানো হয় এবং আমরা প্রতিনিয়তই ইতিহাস চর্চা করি। চর্চা করি বলেই বর্তমানের ঘটনাকে অতীত ইতিহাসের নিরিখে পর্যবেক্ষণের চেষ্টাও চলে। আমাদের প্রত্যাহিক জীবনও ইতিহাসের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। অতীত ইতিহাসের হাত ধরেই বর্তমান তার সামনের গন্তব্য নির্ধারন করে। অতীত ইতিহাস এ জন্য কখনো মুছে ফেলা যায় না, এ কথা মহিউদ্দিন আহমেদও অস্বীকার করতে পারবেন না। তারপরও ঠিক কোন হীন উদ্দেশ্যে জামায়াতের সুরে বলা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যকে তিনি স্বাভাবিক বা গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।
এই গবেষকের আরেকটি মন্তব্য ‘মানুষের নানান বিষয় নিয়ে আবেগ থাকতে পারে। কিন্তু এগুলো নিয়ে যারা সমালোচনা করছে, এখানে একটা রাজনীতি আছে। তারা সবাই পরাজিত শক্তির পক্ষে….’। তার দৃষ্টিতে এই পরাজিত শক্তি হচ্ছে সদ্য পতিত আওয়ামী সরকার। তিনি এই ভাষ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী দলীয় ট্যাগে আবদ্ধ করতে চাচ্ছেন। যা অত্যন্ত আপত্তিকর। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে ঠিক, তার মানে এই নয় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শুধু তাদেরই বিষয়। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ এই দেশের জন্ম ও অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একে কোনো দলীয় কাঠামোয় আবদ্ধ করার সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা বিতর্ক হাজির করছে, আর তাদের বিরুদ্ধে যারা সমালোচনা করছে, নিন্দা জ্ঞাপন করছে, তাদেরকে আওয়ামী লীগের দোসর বা সমর্থক আখ্যা দিয়ে দমন করার চেষ্টাও ফ্যাসিস্ট আচরণ। এই ধরনের অপচেষ্টা মূলত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির পক্ষেই অবস্থান তৈরি করে। এই অবস্থানের মধ্যে দিয়ে জামায়াতসহ তাদের সমমনা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে পৃষ্টপোষকতার সঙ্গে সঙ্গে পুনর্বাসন করছে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার ও তার সমর্থকরা। এর বড় উদাহরণ জামায়াত নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন বাতিল ও নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা। যার ফলে দেশব্যাপী জামায়াত অবাধে নিজেদের মওদুদীপন্থী ইসলামী চরমপন্থার প্রচার প্রসারের কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছে এবং বাংলাদেশ নিয়ে তারা গদগদ প্রেমালাপ উগরে দিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা বার্তা পাই, বাংলাদেশ বিরোধীরাই আজ বাংলাদেশ দরদী হয়ে উঠেছে। ঠিক এ যেন মায়ের থেকে পিসির দরদ বেশি প্রবাদের সমর্থক।
ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই মুহাম্মদ ইউনূস শেখ হাসিনা সরকার পতনের বিজয়কে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ ও ‘দ্বিতীয় বিজয়’ বলে উল্লেখ করেন। তার মতে ‘আমরা স্বাধীন হয়েছি। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। …বাংলাদেশের সব মানুষ নিজেদেরকে স্বাধীন মনে করছেন। আবারও তারা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করলেন’। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি এক মত হওয়া যায় না। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দেশের মানুষের কিছু নাগরিক অধিকার খর্ব হয়েছিল ঠিক, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা পরাধীন দেশের নাগরিকদের মতো এদেশে বসবাস করেছি কিংবা প্রতিমুহূর্ত আমরা অনিরাপদ মনে করেছি। জোর গলায় সত্যিকার অর্থে বিএনপিও এই দাবি করতে পারবে না। জনসাধারণও এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। একমত নন বারবার স্বাধীন হওয়ার তত্ত্বেও। আওয়ামী আমলে বিরোধী মত বলতে, কিছু সংখ্যক বিএনপিপন্থী, জামায়াত ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে শেখ হাসিনা সরকার দমন করে রেখেছিলেন, যার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অস্বীকার করা যায় না বলেই, ইউনূস সরকার ক্ষমতায় এসে তাদের মুক্ত করার পরপরই দেশে ভয়ঙ্কর ধ্বংসযজ্ঞ কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদের এই উত্থান বন্ধ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তার প্রশাসন। বিধায় বাংলাদেশ চরম নৈরাজ্যের দরুন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। মানুষ কাজ বা অন্য কোনো প্রয়োজনে বাহিরে গিয়ে ঠিক ভালোভাবে ঘরে ফিরতে পারবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও জাতীয় শহীদ মিনারে বায়ান্ন ও একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন। এটি ছিল রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা ও বাধ্যবাধকতা। ইউনূস সরকার এটি অমান্য করেননি, কিন্তু এ যাবত পর্যন্ত তার কোনো বক্তব্যে আমরা তাকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করতে দেখি নাই। দেখি নাই বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতাকেও স্মরণ করার নজির। জাতিসংঘের ভাষণেও তিনি এসব নিয়ে কথা বলেননি। তার এই এড়িয়ে যাওয়ার রাজনীতি বাংলাদেশপন্থার জন্য কোনো শুভ ইঙ্গিত বহন করে না। মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে তার অবস্থান সন্দেহজনক বলেই তিনি দেশের প্রগতিশীল মানুষদের সমর্থন পাচ্ছেন না।
ইউনূস সরকার গঠনের পর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের আড়ালে থাকা বাংলাদেশ বিরোধী শক্তিগুলো নিজেদের প্রকাশ্যে এনেছে। প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তারা ‘আমি একাত্তর দেখিনি, চব্বিশ দেখেছি’ ‘ক্ষুধিরামকে দেখিনি, কিন্তু আবু সাঈদকে দেখেছি’, ‘বায়ান্ন দেখিনি, কিন্তু চব্বিশ দেখেছি’ প্রভূতি বয়ানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভ তৈরি করতে চেষ্টা করছে। তারা ‘চব্বিশের গণহত্যা’কে একাত্তরের গণহত্যার সঙ্গে গ্লোরিফাই করছে। বুঝাতে চাচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে আওয়ামী সরকার পতনের এই ছত্রিশ দিনের আন্দোলন এবং আন্দোলনে নিহতের ঘটনা একাত্তরের থেকেও ভয়ঙ্কর এবং তারা এও বুঝাতে চাচ্ছে আমরা পাকিস্তান আমলের চেয়েও পরাধীন ছিলাম। ইতোমধ্যে মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে জামায়াতসহ এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত সমন্বয়কদের বয়ান একই ভাষ্য রূপে হাজির হয়েছে। যা একই সূত্রে গাঁথা। শেখ হাসিনা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করছে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পক্ষ, এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা কোনো ভাবেই অমূলক নয়।
সাম্প্রতিক আওয়ামী অপশাসনের দরুন শেখ হাসিনা সরকারের পতন মানেই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধপন্থার পতন হয়েছে, ঠিক এমনটা ভাবা যায় না। আওয়ামী লীগ সরকার আন্দোলন দমনে ঠিক কতটা গণহত্যা সংঘটিত করেছে, তা বিচারের আওয়াতাধীন। এই ঘটনাকে জড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে খারিজ করার প্রবণতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় কাউকে মামলায় জারানোও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যে কারণে সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) তাপসী তাবাসসুমকে অব্যবহিত ও ওএসডি করার ঘটনা তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাপসী তাবাসসুমের মতো এই দেশের ইতিহাস সচেতন প্রত্যেক মানুষই মনে করে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলতে কোনো দলের প্রয়োজন হয় না’। যারা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে বাংলাদেশে ক্ষমতার ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করবেন, তাদের কাটডাউন তো সময়েরই ব্যাপার।
বাংলাদেশের ভিত্তি রচিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগের উপর। তাদের চেতনা মানেই বাংলাদেশের চেতনা। এই চেতনাকে কাউন্টার দিতে ‘একটি স্বৈরাচার ভাবাপন্ন সরকার উৎখাত’র আন্দোলনের চেতনাকে বৃহৎভাবে সমকক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো সম্ভব নয়। বরং সাম্প্রতিক এই আন্দোলনের ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’ নির্মাণের দর্শন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি অংশ মাত্র। মুক্তিযুদ্ধকে পাশ কাটিয়ে কিংবা অস্বীকার করে এর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সত্যিকার অর্থেই ক্ষমতাসীনদের যদি কোনো দূরভিসন্ধি না থাকে, তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে বলে আমরা মনে করি। কেননা, প্রত্যেকেরই চাওয়া ধর্ম নিরপেক্ষ, শ্রেণি বৈষম্যহীন চেতনার সমাজব্যবস্থা। যা মুক্তিযুদ্ধের মানবিক মর্যাদার সাম্য ও ন্যায়ের বাংলাদেশ চিন্তাতেই প্রোথিত রয়েছে।
•লেখক: কবি ও সমাজচিন্তক