ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু প্রতিরোধ আন্দোলনকে শক্তিশালী করবে : ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। বুধবার (১৬ অক্টোবর) দক্ষিণ গাজায় এক অভিযানে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর পর ইরান বলেছে, এই মৃত্যু ফিলিস্তিনের মুক্তির লড়াইকে আরও শক্তিশালী করবে। ইরানের জাতিসংঘ মিশন এক বিবৃতিতে সিনওয়ারের শেষ মুহূর্তগুলোকে ইরাকের সাবেক নেতা সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে তুলনা করেছে।

২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার সময় সাদ্দাম তাদের কাছে ‘জীবনভিক্ষা চেয়েছিলেন। ’ কিন্তু সিনওয়ারকে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্রে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মুসলিমরা শহীদ সিনওয়ারকে খোলা ময়দানে যুদ্ধের পোশাকে, শত্রুর সম্মুখীন অবস্থায় দেখেছে যা প্রতিরোধের চেতনাকে আরও শক্তিশালী করবে। ’

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী প্রজন্ম ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য সিনওয়ারের পথ অনুসরণ করবে, তাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন তিনি। যতদিন দখলদারিত্ব ও আগ্রাসন থাকবে, ততদিন প্রতিরোধ আন্দোলনও থাকবে, কারণ শহীদরা চিরজীবন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকেন।

ইরানের এই বিবৃতি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থনকে পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং দাবি করেছে, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু প্রতিরোধের অদম্য চেতনাকে আরও জাগ্রত করবে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গত বছরের ৭ অক্টোবর নজিরবিহীন হামলা চালানোর মূল কারিগর ছিলেন সিনওয়ার বলে মনে করা হয়। ১৯৬২ সালে গাজার খান ইউনিস শহরে জন্মগ্রহণ করেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার।

তাকে প্রায়ই হামাসের সবচেয়ে অনমনীয় শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একজন হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। ইসরায়েলের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সোচ্চার ভূমিকা রাখায় আশির দশকের শুরুর দিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাতে বারবার গ্রেফতার হন সিনওয়ার।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে যোদ্ধাদের একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় সিনওয়ার সহায়তা করেন। পরবর্তী সময়ে এ নেটওয়ার্ক হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেড হিসেবে গড়ে ওঠে।

১৯৮৭ সালে শেখ আহমেদ ইয়াসিন হামাস প্রতিষ্ঠা করার পরপরই যারা সংগঠনটির নেতৃত্বে আসেন, ইয়াহিয়া সিনওয়ার তাদের একজন।

পরের বছরই ইসরায়েলি বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে ও চার দফা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। যার অর্থ, ৪২৬ বছরের সমপরিমাণ কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। পরে বন্দী বিনিময়ে তিনি ২০১১ সালে মুক্তি পান।

কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দ্রুতই সিনওয়ার হামাসের শীর্ষ পদে ফেরত আসেন। ২০১২ সালে সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। দায়িত্ব পান সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের সঙ্গে রাজনৈতিক শাখার কার্যক্রম সমন্বয়ের।

২০১৪ সালে গাজায় সাত সপ্তাহ ধরে ব্যাপক হামলা ও অভিযান চালায় ইসরায়েল। ওই সময় হামাসের উভয় শাখায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখেন সিনওয়ার। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্র তাকে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।

২০১৭ সালে সিনওয়ার হামাসের গাজা শাখার প্রধান হন। স্থলাভিষিক্ত হন ইসমাইল হানিয়ার। হানিয়া তখন সংগঠনটির রাজনৈতিক শাখার প্রধান নির্বাচিত হন।

গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করলে হানিয়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ সফর করে বক্তব্য দেন। নিহত হওয়ার আগপর্যন্ত দেশে দেশে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন আদায় ও গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন হানিয়া। তবে ৭ অক্টোবরের পর থেকে একেবারেই কথাবার্তা বলেননি সিনওয়ার।

শেয়ার করুন