বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৬১তম জন্মদিনে সবার জন্য দোয়া চেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে আওয়ামী লীগের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এ নিয়ে বার্তা দেন তিনি। সেই গ্রুপে গণমাধ্যমকর্মীরাও যুক্ত রয়েছেন।
ওই বার্তায় শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আজ ১৮ই অক্টোবর। ১৯৬৪ সালে এই দিনে আমার ছোট ভাই রাসেল জন্মগ্রহণ করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাবা মা ভাইদের সঙ্গে রাসেলকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ছোট্ট ১০ বছরের শিশুটির কি অপরাধ ছিল যে তাকেও নির্মম বুলেটের আঘাতে হত্যা করা হয়েছিল? বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুলে রাসেল পড়াশোনা করত। টুঙ্গিপাড়া গেলে গরিব ছোট ছোট ছেলেদের নিয়ে খেলা করত, তাদের নিয়ে প্যারেড করাতো এবং নতুন নতুন কাপড় জামা উপহার দিত। ওই শিশুরা উন্মুখ হয়ে বসে থাকত কবে রাসেল আসবে তাদের নিয়ে খেলা করবে, প্যারেড করা শেখাবে। প্রতিবার প্যারেড শেষ হলে এক টাকা করে বকশিশ দিত, গরিব বলে কখনো অবহেলা করত না। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে প্রতিবেশী বন্ধুদের নিয়ে সাইকেল চালাত খেলাধুলা করত।’
এতে লেখা আছে, ‘বঙ্গবন্ধু ভবন থেকে ১৯৭১ সালে ২৬শে মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই দিনই পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং এই ভবনটি ভাঙচুর করে লুটপাট করে। এরপর পরপরই আমার মাকে গ্রেপ্তার করে সঙ্গে রাসেলও বন্দী হয়। ধানমন্ডি (১৮ নম্বর রোড পুরোনো) ৯ এ নম্বর রোডের ২৬ নম্বর একতলা বাড়িতে বন্দী করে রাখে।’
শেখ হাসিনা লিখে, ‘আমার রাসেল খুব চাপা স্বভাব ছিল। কামাল ও জমাল মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়, বাবা ও ভাইদের জন্য রাসেলের চোখে পানি। ছোট্ট শিশুটিকে বন্দিখানায় কষ্টের জীবন কাটাতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ভবনে আমার বাবা-মা-কামাল, জামাল ও রাসেল আমার চাচা নাসেরসহ পরিবারের সকল সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কী অপরাধ ছিল আমার ছোট্ট রাসেলের। যে ফুলটি না ফুটতেই ঝরে গেল। রাসেল “মায়ের কাছে যাব-মায়ের কাছে যাব” বলে কান্নাকাটি করছিল, একজন ঘাতক এসে বলল- “চলো তোমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাই”, এই বলে বাবা–মায়ের লাশের ওপর দিয়ে রাসেলকে নিয়ে যায় এবং গুলি করে হত্যা করে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কী দুর্ভাগ্যের বিষয় যে বাড়ি স্বাধীনতার সূতিকাগার, যে বাড়িতে আমার ছোট্ট সোনামণি রাসেল জন্মগ্রহণ করেছিল। সব হারিয়ে আমি ও রেহানা যে বাড়িটি স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে জনগণের জন্য দান করে দিয়েছি, সেই বঙ্গবন্ধু ভবন ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে নির্মমভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার রাসেলের সব স্মৃতিটুকু ও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘দেশবাসীর কাছে আমাদের আহ্বান রাসেলের জন্য আপনারা দোয়া করবেন। রাসেলের শহীদি মৃত্যু, তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থানে বাবা-মা–ভাইদের সঙ্গে যেন সে জায়গা পায়। প্রিয় রাসেল তুমি শান্তিতে ঘুমাও আমরা জেগে আছি। ‘‘তোমার হাসু আপা।’’’