নিখোঁজের ২ দিন পর হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমানের মৃতদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাওয়া গেছে। তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন তার সহকর্মীরা। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (২০ অক্টোবর) রাতে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন জানান, নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমানের কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে নবীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। সাধারণ ডায়েরীর কয়েক ঘণ্টার মাথায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমানের মৃতদেহ রয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। পরে পরিবারকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) অনার্সের ১ম বর্ষে ভর্তি ফি অতিরিক্ত আদায়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমানকে দেড় ঘণ্টা কার্যালয়ে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও শিক্ষকরা তালা খুলে অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমানকে মুক্ত করেন।
এসময় অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রশিক্ষক বৈঠকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রোববার কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়ে কলেজ ত্যাগ করেন অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমান। শুক্রবার সকালে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের বাসা থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়া যাওয়ার উদ্দেশে বের হন ফজলুর রহমান। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
রোববার সকাল ১১টায় শিক্ষার্থীরা আবারও কলেজে অবস্থান নেন। অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমান কলেজে না আসায় অন্য শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা।
এসময় উপস্থিত শিক্ষকরা অধ্যক্ষের পরিবারের বরাত দিয়ে শিক্ষার্থীদের জানান, অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমানের দুই দিন ধরে কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমানের নিখোঁজের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত আবেদন করেন নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মো. আমির হোসেন।
রোববার (২০ অক্টোবর) বিকেলে নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমানের স্ত্রী সৈয়দা সুলতানা আক্তারও স্বামী মো. ফজলুর রহমান নিখোঁজের বিষয়টি উল্লেখ করে নবীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সাধারণ ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেন, শুক্রবার সকাল ৮টায় নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের বাসা থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়া যাওয়ার উদ্দেশে বের হন নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমান। তারপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাধারণ ডায়েরি দায়ের পর দেশের সব থানায় বার্তা পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় ঢাকার শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল খালেক জানান, অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাওয়া গেছে।
এসআই আরও জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় জহির নামে জনৈক ব্যক্তি ফজলুর রহমানকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন। এরপর তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টায় মারা যান।
ধারণা করা হচ্ছে, নেশা জাতীয় কোনও কিছু দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে সব কিছু লুট করে নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা। তবে ময়নাতদন্ত শেষে মূল রহস্য জানা যাবে।
এদিকে মৃত্যুর খবরে পরিবার ও ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমানের মৃত্যুর বিষয়টিকে রহস্যজনক উল্লেখ করে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন তাঁর সহকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কর্মজীবনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ও হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং সবশেষ নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।