সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেছেন, তার বিরুদ্ধে এই হত্যাচেষ্টা মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হয়নি। ব্যক্তি স্বার্থে কেউ অতি উৎসাহী হয়ে এই মামলা দিয়েছেন। সোমবার (২১ অক্টোবর) খিলগাঁও থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পাওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।
পান্না বলেন, আমি মনে করি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মামলা দেওয়া হয়নি। ব্যক্তি স্বার্থে কেউ অতি উৎসাহী হয়ে মামলা দিয়েছে। যতটুকু অনুমান করছি এই মামলা দেওয়ার ক্ষেত্রে বরিশালের মুলাদী (তার নিজ এলাকা) উপজেলার কেউ কেউ জড়িত আছেন।
তিনি বলেন, মামলা দিয়েও আমাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা থেকে বিরত রাখা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমি যতুটুক খোঁজ পেয়েছি এই যে মামলা হলো এটা মুলাদীর (বরিশাল) লোকাল পটিলিক্স। সেখানে একজন আইনজীবীও আছে দুর্ভাগ্যবশত। পংকজ দেবনাথের (সাবেক সংসদ সদস্য) বিরুদ্ধে বাদীর কিছু অভিযোগ ছিল। তাকে বলছে পংকজ দেবনাথের বিরুদ্ধে মামলা হবে। বাদী লেখা-পড়া কিছু জানে না। সেখানে কি কি নাম ঢুকিয়েছে। আর সে সই দিয়ে আসছে। এটা শুনছি। সত্যি কি মিথ্যা আমি জানি না। মুলাদীর রাজনীতি বা বৃহত্তর বরিশালের রাজনীতির সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। সারা বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে আমার সম্পর্ক। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক। যদিও আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নই।
সরকারের বিরোধীতা যেটা করছিলেন সেটা কি এখনো চালিয়ে যাবেন কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জেড আই খান পান্না বলেন, সরকারের বিরোধিতা করিনি। সরকারের কিছু ভুল পদক্ষেপ, ভুল কার্যক্রমের আমি বিরোধিতা করেছি, সমালোচনা করেছি।
এর আগে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় দায়ের করা হত্যা চেষ্টা মামলায় জেড আই খান পান্নাকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলার পুলিশ রিপোর্ট দেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি জামিনে থাকবেন। সোমবার (২১ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে জেড আই খান পান্নার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, আইনজীবী আলী আহমেদ খোকন, আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেনসহ অনেকে।
রোববার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর খিলগাঁও থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা হয়।
এ মামলায় আসামি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ ১৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আইনজীবী জেড আই খান পান্না এ মামলার ৯৪ নম্বর আসামি।
গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলাম নামে একজনকে গুলি ও মারধর করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়। গত ১৭ অক্টোবর মামলাটি করেন আহাদুলের বাবা মো. বাকের।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজারের পশ্চিমে শুক্কুর আলী গার্মেন্টস মোড়ে ছাত্রজনতার আন্দোলনে অংশ নেন বাদী মো. বাকেরের ছেলে মো. আহাদুল ইসলাম। এসময় পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন এবং ১৪-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ ককটেল ও সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটান এবং আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নসাৎ করার জন্য হত্যার উদ্দেশ্যে এ গুলি চালানো হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। সেখানে আহাদুল ইসলাম বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। সন্ত্রাসীরা তাকে পরে আরও লাঠিপেটা করেন। আহাদুলকে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিক, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।